ফরিদ হোসেন, মাদারীপুর প্রতিনিধি :
মাদারীপুরে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় এক নেতার কারনে অতিষ্ট উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন। কাউকে তোয়াক্কা করেন না সে। কোন শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বললেই তার উপর সৃষ্টি করা হয় বিভিন্ন ধরনের চাপ। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই কাজে আসে না । নারী কেলেঙ্কারী, অর্থ আত্মসাৎ, গোপনে বহুবার বিদেশ ভ্রমণ, বদলী ও চাকুরীর দালালিসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অদৃশ্য শক্তির কারনে বেচে যায় সে। তাহলে কি তাকে নিয়ন্ত্রন করার মত প্রশাসনের কোন দপ্তর নেই এমন প্রশ্ন শিক্ষকদের। তদন্ত চলছে তাতে যা হবার তাই হবে বলে জানান অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
জানাযায়, মাদারীপুর সদরের পুলিশ লাইন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বাচ্চু। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নাম লেখান মহান পেশা শিক্ষকতায়। সরকারের ঘোষনায় রেজিস্টার্ড স্কুলকে সরকারী করনের ঘোষনার পরে শিক্ষকরা তাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক করা ও কোন কাগজের ঘাটতি থাকলে সেই কাগজপত্র সঠিক করে দেয়ার কারনে বনে যান শিক্ষক নেতা। সেই সুবাদে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক টাকা পয়সা। মাদারীপুর শহরে গড়েছেন কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার পর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্ব শেষ বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদ।কোন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে সহজে মুখ খুলতে চাননা । কথিত আছে তার কথা না শুনলে সেই শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কলংঙ্ক নিয়েই যেতে হয়। কয়েক বছর আগে তার সাথে দ্বিমত করায় দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এ.টি.ই.ও) কে কোন এক শিক্ষিকাকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগে ফাসিয়ে বদলি করান সে ও তার চক্র।এক শিক্ষিকা যৌন হয়রানীর লিখিত অভিযোগও করেন তার বিরুদ্ধে। অদৃশ্য কারনে অভিযোগটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ০২/০২/২০২৩ হতে ০৫/০২/২০২৩ কলকাতা, ২৯/১০/২০১৯ হতে ০১/১১/২০১৯ কলকাতা, ২৬/০৬/২০১৯ হতে ০২/০৭/২০১৯ কলকাতা এবং ২৫/০৪/২০১৮ হতে ২৭/০৪/২০১৮ কলকাতা ভ্রমণ করেন।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন থেকে পাওয়া রেকর্ড অনুযায়ী এ ঘটনার সত্যতার প্রমান পাওয়া যায়। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা তুলে নিয়ে তা আত্মসাতের কারনে তার বিরুদ্ধে দুদকের গণ শুনানীতে অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং সেই অভিযোগ প্রমানিতও হয় বলে জানা যায়। বিগত দিনে শিক্ষকদের বদলী ও চাকুরী দেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের কাগজপত্র ঠিক করে দেয়া ও অনেকের নতুন কাগজপত্র ঠিক করে চাকুরী পাকাপক্ত করতে কন্ট্রাক্ট নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।শিক্ষকদের সমস্যা সরাসরি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গেলে বা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী করে দিলে ওই শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে ঝামেলা সৃষ্টি করেন আব্দুর রহমান বাচ্চু। কোন শিক্ষক তার কাছে সমস্যা নিয়ে গেলে করতে হয় তার সাথে চুক্তি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন শিক্ষকরা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও কোন লাভ হয় না তেমন।
একজন থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। স্থানীয় কিছু নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়ে ওঠে না। কিছু শিক্ষক নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করে রেখেছে সে। তার কথা না শুনলে বা তার অন্যায় আবদার না মানলে তার উপরস্থ কর্মকর্তাকে অপমান অপদস্থ করতে দ্বিধাবোধ করেন না।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমান বাচ্চু বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল। এসব অভিযোগ সত্য নয়। একবার তদন্ত হয়েছে । সেখানে নির্দোশ প্রমানিত হয়েছেন তিনি।
মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, তার বিরুদ্ধে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগগুলো পেয়ে ডিজির কাছে পাঠানো হয়েছে তিনি এর ব্যবস্থা নিবেন। আমার যা করনিয় তা করেছি। পরবর্তী নিদের্শ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার ও পুলিশ লাইনস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাসুদ আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এক সহকারী পুলিশ সুপারকে। এছাড়া উল্লোখযোগ্য আরও অভিযোগ তার কাছে গেলে সে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন।