শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (১৯২১-১৯৭৫)

জি এম নিউজ জি এম নিউজ

বাংলার প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২২ | আপডেট: ১১:৩৯:পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০২২

আবদুর রব সেরনিয়াবাত (১৯২১ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার ও ভূমি রাজস্ব ও বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপা। তিনি শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সময়ে নিহত হন। তাঁর পুত্র আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বর্তমানে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তাঁর পৌত্র।

গণতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদকের (১৯৫৬-৫৭) দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি (ন্যাপ) গঠিত হলে তিনি এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন (১৯৬৪)। ১৯৬৯ সালে সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বরিশাল থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনায় বিশিষ্ট ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনি ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৩ সালে বরিশাল থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এদেশের কৃষকদের মুক্তির লক্ষ্যে তিনি কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্যের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।

হত্যাকাণ্ড : তার বাসভবন ২৭ মিন্টো রোডে, মেজর শাহরিয়ার রশিদ, মেজর আজিজ পাশা, ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ – এর নেতৃত্বে আনুমানিক ভোর ৫টায় আক্রমণ করা হয়। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, ভাগ্নে শহিদ সেরনিয়াবাত নিহত হন এবং অন্যান্যদের সাথে তার স্ত্রী জখম হন। তার পুত্র আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ দরজার পিছনে লুকিয়ে থেকে বেঁচে যান। ১৯৯৬ সালের ২১ অক্টোবর, রমনা থানায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তার পুত্র আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বার এবং ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মিন্টো রোডের বাসভবন বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরের অংশ।

জননেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের উত্তরসূরী ও যোগ্যপুত্র আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ১৯৯১ সালে বরিশাল-১ ( গৌরনদী আগৈলঝাড়া) থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় বার, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ মোট চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিগত সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তি কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেন। আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষন কমিটির আহবায়ক ( মন্ত্রী পদমর্যাদা ), বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এছাড়া শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সুযোগ্য দৌহিত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র বধু ও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র শহীদ জননী মাতা সাহানারা বেগম কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংকেতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বরিশালে একটি স্টেডিয়াম, বরিশাল কুয়াকাটা হাইওয়েতে সেতু, প্রেস ক্লাব, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, টেক্সটাইলইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গৌরনদীতে টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আইন মহাবিদ্যালয়, সরকারি গৌরনদী কলেজের ছাত্রবাস সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email