
কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পুরাতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। বরিশালে একটি নদীবন্দর রয়েছে যেটি দেশের অন্যতম প্রাচীন, দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর।
নীচে বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পাশাপাশি বরিশাল শহরে বা তার আশেপাশে জন্মগ্রহণ/বসবাসকারী উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের বরিশাল বিভাগের নাগরিক অথবা তার আশেপাশে জন্মগ্রহণ/বসবাসকারী অথবা বিদেশে বসবাসরত যার জন্ম বা আদি নিবাস বরিশাল বিভাগে। আজ পরিচিত হবো এমনই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে।
এ কে ফজলুল হক:
বাঙালি রাজনীতিবিদ । বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালি কুটনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে ‘শেরেবাংলা’ নামে পরিচিত।তিনি যে-সব রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তার মধ্যে কলকাতার মেয়র(১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬-১৯৫৮) অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ. কে. ফজলুক হক বহু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেই জোর দিয়েছিলেন বেশি।তার আমলে দরিদ্র কৃষকের উপরে কর ধার্য না করে সারা বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়। বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন। এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বৃটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ক্লাউড কমিশন গঠন করে। ১৯৩৮ সালের ১৮ আগস্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হয় এবং জমিদারদের লাগামহীন অত্যাচার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়।১৯৩৯ সালের ‘বঙ্গীয় চাকুরি নিয়োগবিধি’ প্রবর্তন করে মন্ত্রিপরিষদ মুসলমানদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ চাকুরি নির্দিষ্ট রাখার ব্যবস্থা করে। এ বছরেই ‘চাষী খাতক আইন’-এর সংশোধনী এনে ঋণ সালিশী বোর্ডকে শক্তিশালী করা হয়। ক্লাউড কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৪০ সালে হক সাহেব আইন পরিষদে ‘মহাজনী আইন’ পাস করান। এ বছরই ‘দোকান কর্মচারি আইন’ প্রণয়ন করে তিনি দোকান শ্রমিকদের সপ্তাহে একদিন বন্ধ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের নির্দেশ জারী করেন। কৃষি আধুনিকায়নের জন্য ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনার দৌলতপুরে কৃষি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাট চাষীদের নায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালে ‘পাট অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। ১৯৪১ সালের ১২ ডিসেম্বর আবুল কাশেম ফজলুল হক দ্বিতীয় বারের মত মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। শরৎচন্দ্র বসু ও হিন্দু মহাসভার সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সঙ্গে প্রগতিশীল যুক্ত পার্টি গঠন করে তিনি সেই দলের নেতা হয়েছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর এই মন্ত্রী পরিষদ বাংলার গভর্ণর জেনারেল হার্বাটের কাছে শপথ গ্রহণ করেন। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
আবদুর রব সেরনিয়াবত:
সেরনিয়াবাত, আবদুর রব (১৯২১-১৯৭৫) আইনজীবী ও রাজনীতিক। বাংলা ১৩২৭ সনের ২৭ চৈত্র (১৯২১ খ্রি.) তিনি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার সরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভোলা হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা, বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে বি.এ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’ ডিগ্রি লাভ করেন। গণতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদকের (১৯৫৬-৫৭) দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি (ন্যাপ) গঠিত হলে তিনি এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন (১৯৬৪)। ১৯৬৯ সালে সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বরিশাল থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনায় বিশিষ্ট ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনি ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৩ সালে বরিশাল থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এদেশের কৃষকদের মুক্তির লক্ষ্যে তিনি কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্যের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
মোহাম্মদ মোস্তফার জন্ম ১৯৪৯ সালে বরিশালের দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামে। বাবার নাম হাবিলদার হাফিজ। বাসার সামনে দিয়ে সৈন্যদের সুশৃঙ্খল কুচকাওয়াজ দেখে কিশোর মোস্তফার মনেও সাধ জাগতো সেনা সদস্য হবার। পারিবারিক বাধার কারণে ১৯৬৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে দেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে নিয়োগ করা হয় ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিল্লায়।
১৯৭০ সালে তিনি বিয়ে করেন ১৬ বছরের কিশোরী পেয়ারা বেগমকে। তিনি যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন তখন পেয়ারা বেগম ছিলেন অন্তঃস্বত্ত্বা। মোহাম্মদ মোস্তফা স্ত্রীকে বলেছিলেন তার অনুপস্থিতিতে যদি ছেলে হয় নাম ‘বাচ্চু’ আর মেয়ে হলে নাম ‘টুনি’ রাখতে।
১৯৭১ সালের উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ৪ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অভ্যন্তরীণ গোলোযোগ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোতায়েন করে। ভালো বক্সার হিসাবে রেজিমেন্টে তার সুনাম ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্বে বক্সার হিসাবে সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা অবৈতনিক ল্যান্স নায়েক হিসাবে পদোন্নতি পান। পাকিস্তানি চক্রান্ত বুঝতে পেরে কয়েক জন বাঙ্গালি সৈনিককে সাথে নিয়ে মেজর শাফায়াত জামিল অধিনায়ক লে. কর্নেল খিজির হায়াত খান সহ সকল পাকিস্তানি অফিসার ও সেনাদের গ্রেফতার করেন। এরপর তারা মেজর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।
১৪ এপ্রিল পাকিস্তানিরা হেলিকপ্টার গানশীপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬ বিমান যোগে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনীর ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর। গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার ছিলেন মোহাম্মদ মোস্তফা। পাকিস্তানি আক্রমণে প্লাটুনটির সমস্ত রেশন ধ্বংস হয়ে যায়। নতুন করে কোন রেশন না পাওয়ায় সবাই দীর্ঘ সময় ধরে অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। এমন অবস্থায় মোহাম্মদ মোস্তফা তার এল. এম. জি. সাথে নিয়ে আখাওড়া রেল ষ্টেশনে মেজর শাফায়াত জামিলকে রেশনের অনুরোধ করেন। মেজর শাফায়াত জামিল তাদেরকে অনতিবিলম্বে প্রতিরক্ষা অবস্থানে যেতে নির্দেশ দেন এবং সেখানে রেশনের বন্দোবস্ত করেন।
১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের উপরে। এমন সময় বৃষ্টিও শুরু হয়। প্রচন্ড আক্রমণের খবর পেয়ে মেজর শাফায়াত হাবিলদার মুনিরের নেতৃত্বে ডি কোম্পানির ১১ নম্বর প্লাটুন পাঠান অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে। সারাদিন যুদ্ধ চলে। ১৮ এপ্রিল সকালে বর্ষণমুখর পরিস্থিতিতে শত্রু দরুইল গ্রামের কাছে পৌছে যায়। মূল আক্রমণ আরম্ভ হয় দুপুর ১২ টায় অবস্থানের পশ্চিম দিক থেকে। শত্রুর একটি দল প্রতিরক্ষার পিছন দিক দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলছিলো। মুক্তিবাহিনী দরুইল গ্রাম থেকে আখাওড়া রেল ষ্টেশনের দিকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে সরে আসতে হলে তাদের প্রয়োজন ছিলো নিরবিচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মোহাম্মদ মোস্তফা সহযোদ্ধাদের জানান তিনি নিজে এই কাভারিং ফায়ার প্রদান করবেন এবং সবাইকে পেছনে হটতে নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা মোস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যের টানে মোস্তফা ছিলেন অবিচল। তিনি সহযোদ্ধাদের বললেন তার প্রাণের তুলনায় সহযোদ্ধাদের অনেকের প্রাণের মূল্য অধিক।
মোস্তফার ক্রমাগত নিখুঁত ফায়ারে পাকিস্তানিদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হন এবং তাদের সম্মুখ গতি মন্থর হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে মোস্তফার অবস্থানের উপরে মেশিনগান এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মোস্তফার এল.এম.জি.-র গুলি নিঃশেষ হয় এবং তিনি মারত্মক ভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তান বাহিনীর সৈনিকরা ট্রেঞ্চে এসে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে আইএসসি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন।১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে। বরিশালের নিজ গ্রামের নাম তাঁর দাদার নামে হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর ইউনিয়নের নাম ‘আগরপুর’ পরিবর্তন করে ‘মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর’ ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল জেলা পরিষদ ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মাণ করেছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷
সুফিয়া কামাল
সুফিয়া কামালের জন্ম জুন ২০, ১৯১১, মৃত্যু নভেম্বর ২০, ১৯৯৯। বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখক ও নারীবাদী।স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা বাসন্তীসেসময়ের প্রভাবশালী সাময়িকী সওগাতে প্রকাশিত হয়। ত্রিশের দশকে কলকাতায় অবস্থানকালে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র যেমন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখের দেখা পান। বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা ও প্রতিজ্ঞা তাঁর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়, যা তাঁর জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যচর্চা চলতে থাকে। ১৯৩৭ সালে তাঁর গল্পের সংকলন কেয়ার কাঁটা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাঁঝের মায়ার মুখবন্ধ লিখেন কাজী নজরুল ইসলাম। বইটি বিদগ্ধজনের প্রশংসা কুড়ায় যাদের মাঝে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে আর্থিক সমস্যায় ফেলে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। দেশবিভাগের পূর্বে তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত সাময়িকী বেগম-এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কারফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন
মাহমুদ, শহীদ আলতাফ
মাহমুদ, শহীদ আলতাফ (১৯৩৩-১৯৭১) সঙ্গীতশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বরিশাল শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর প্রকৃত নাম এ.এন.এম আলতাফ আলী। তাঁর পিতার নাম নিজাম আলী। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি কিছুদিন বিএম কলেজে অধ্যয়ন করেন; পরে কলকাতার আর্ট স্কুলে ছবি অাঁকা শেখেন।
আলতাফ মাহমুদ
শৈশব থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আলতাফ মাহমুদের অনুরাগ প্রকাশ পায়। তাঁর কণ্ঠ ছিল দরদ আর আমেজপূর্ণ। বরিশাল জেলা স্কুলে অধ্যয়নকালেই তাঁর সঙ্গীতচর্চা শুরু হয় এবং অল্প বয়সেই তিনি নিজের প্রচেষ্টায় গণসঙ্গীত আয়ত্ত করেন। বিভিন্ন জলসা-অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি প্রশংসা অর্জন করেন। বিখ্যাত বেহালাবাদক সুরেন রায়ের নিকট তিনি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন।
১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকা এসে ‘ধূমকেতু শিল্পী সংঘ’-এ যোগদান করেন। পরে তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন এবং গণজাগরণের লক্ষ্যে বহু গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ ভাষা-শহীদদের উদ্দেশ্যে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত এ বিখ্যাত গানটি বর্তমানে যে সুরে গাওয়া হয় তার রচয়িতা আলতাফ মাহমুদ। শহীদ দিবসের এ গানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের জনগণের হূদয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
১৯৫৬ সালে ভিয়েনায় আয়োজিত শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি করাচি পর্যন্ত গিয়েছিলেন, কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করায় তিনি আর যেতে পারেননি। ওই সময় তিনি দেশে না ফিরে ১৯৬৩ পর্যন্ত করাচিতেই অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ওস্তাদ আবদুল কাদের খাঁর নিকট উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম নেন। কিছুকাল নৃত্যশিল্পী ঘনশ্যাম ও গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তিনি কাজ করেন। করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে ১৯৬৫ সালের দিকে তিনি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ শুরু করেন এবং তানহা, ক্যায়সে কহুঁ, কার বউ-সহ উনিশটি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এর পাশাপাশি তাঁর সাংগঠনিক তৎপরতাও অব্যাহত থাকে। এ সময় তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’সহ অনেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন সভা-সমিতিতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
বাংলা সংস্কৃতির বিকাশের জন্য যাঁরা সংগ্রাম করেছেন, আলতাফ মাহমুদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। অঙ্কন শিল্পেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি দেশাত্মবোধক গান রচনা ও পরিবেশনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী জনগণকে গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর সেসব গান তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ ও খাদ্য দিয়েও তিনি প্রত্যক্ষ্যভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করেন। ওই বছর ৩০ আগস্ট পাকবাহিনীর লোকেরা তাঁকে তাঁর ঢাকার বাসস্থান থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। দেশের সংস্কৃতিচর্চা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত করে।
বরিশালের কিছু বিখ্যাত মানুষের নাম
মির্যা আগা মুহম্মদ বাকের, বুযুর্গ উমেদপুর এবং সলিমাবাদ পরগনার জমিদার, দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খানের জামাতা
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭–১৯৪৩), পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪) এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬–১৯৫৮)[১]
মোহাম্মদ আলী বগুড়া, (১৯০৯-১৯৬৩), বাঙালি রাজনীতিবিদ, পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ।
আবদুল জব্বার খান, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার (১৯৬৫–১৯৬৯)
খান বাহাদুর হাসেম আলী খান, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী। কৃষক আন্দোলনের নেতা
পাকিস্তানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার পিতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল , পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী
মোশারেফ হোসেন শাহজাহান রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মন্ত্রী।
আবদুর রহমান বিশ্বাস, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি (১৯৯১–১৯৯৬)
কামাল হোসেন, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা।
তোফায়েল আহমেদ, রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মন্ত্রী
আব্দুল বাতেন তালুকদার রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী
শাহজাদা আবদুল মালেক খান রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মন্ত্রী
মোহাম্মদ কেরামত আলী, প্রাক্তন মন্ত্রী
নাজিউর রহমান মঞ্জু, রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মন্ত্রী
শওকত হোসেন হিরণ, প্রাক্তন সংসদ সদস্য , বরিশালের মেয়র (২০০৮–২০১৩)
ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল ,সাবেক প্রতিমন্ত্রী
আবদুর রব সেরনিয়াবাত, মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, রাজনীতিবিদ
আলতাফ হোসেন চৌধুরী ,বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান, রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ।
জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজনীতিবিদ, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী
আমির হোসেন আমু, রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী
গুরুদাস দাশগুপ্ত, ভারতীয় সংসদ সদস্য
শাহজাহান ওমর, বীর উত্তম, রাজনীতিবিদ
মণিকুন্তলা সেন, বিপ্লবী
প্রিয়া রঞ্জন দাশমুন্সি, প্রখ্যাত কংগ্রেস রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী
রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী
আ. স. ম. ফিরোজ সাবেক চিফ হুইপ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
শ ম রেজাউল করিম, নাজিরপুর – তিনি আইনজিবী ,বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী
জাহিদ ফারুক শামীম রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য বরিশাল-৫
মোস্তফা জামাল হায়দার, রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী
সৈয়দ আজিজুল হক, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য বরিশাল-২
কাজী গোলাম মাহবুব, ভাষা আন্দোলনের কর্মী ও রাজনীতিবিদ
নাসরিন জাহান রত্না, রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য বরিশাল-৬
মোঃ শাহে আলম তালুকদার সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং উজিরপুর – বানারিপাড়া বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য।