শহরের এই কর্মব্যস্ত কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে একটু ছটি নিতে পারেন প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও থেকে। যারা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন তারা নিঃসন্দেহে যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও। ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন ইতিহাসের এই প্রাচীন নিদর্শন। আর এতে আরো বাড়তি লাভ হলো, পরিবারের ছোট বাচ্চাদের বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের অনেক কিছু স্বচক্ষে দেখার সাথে সাথে জানাও হবে যা তাদের ভবিষ্যত জীবনে অনেক কাজে দিবে।
সোনারগাঁও এর ইতিহাস
শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে সোনারগাঁও ছিলো বাংলাদেশের এক গৌরবময় জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত, নৈসর্গিক পরিবেশের প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও নামটির উদ্ভব হয়েছে সুবর্ণগ্রাম থেকে। আবার অনেকের মতে বারো ভুইয়ার প্রধান ঈশা খার স্ত্রী সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়েছে। আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলে মুসলিম আধিপতের সূচনার পর আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার রাজধানী ঢাকা ঘোষণা হবার আগ পর্যন্ত মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিলো সোনারগাঁও। যদিও তখন প্রাচীন এই রাজধানী পানাম নামেই পরিচিত ছিলো। ঈশা খাঁ ও তাঁর বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। বর্তমানে সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা।
সোনারগাঁও গিয়ে যা যা দেখবেন
সোনারগাঁও রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, পানাম সিটি ও বাংলার তাজমহল। বাংলার তাজমহল ছাড়া বাকি জায়গা গুলো খুব কাছাকাছি।
প্রাচীন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর
আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে ধরে রাখা ও সর্বজন স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্য ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁও এর পানাম নগরীর একটি পুরানো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। পানাম নগরীর ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁর তোরণ এই দুটি একত্রিত নিয়ে প্রায় ১৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে কারু ও লোক শিল্প ফাউন্ডেশনের অবস্থান। এই ফাউন্ডেশনে ১টি জাদুঘর, ১টি লোকজ মঞ্চ, সেমিনার রুম ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রাচীন নির্দেশিকা কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে সংরক্ষিত রয়েছে এই জাদুঘরে। জাদুঘরটিতে বাংলাদেশের গ্রামবাংলার প্রাচীন শিল্পীদের সুনিপুন হাতের তৈরি বিভিন্ন শৈল্পিক ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য নানা পন্য সামগ্রী রয়েছে।
সোনারগাঁও জাদুঘরের সময়সূচী ও প্রবেশ ফি: জাদুঘর বুধ ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে (বৃহস্পতিবার মেইন বন্ধ আর বুধবার হাফ খোলা থাকে তবে কর্তৃপক্ষ বুধবারও প্রায়ই বন্ধ রাখে)। এছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। জাদুঘরে প্রবেশ ফি ৫০ টাকা (প্রতি ব্যক্তি)।
ঘুরতে যাওয়ার সময় কিছু বিষয় মনে রাখবেন –
ঢাকা থেকে সোনারগাঁও অনেকটাই কাছ, তাই আপনি প্রিয়জনদের সঙ্গে খাওয়ার মতো একা ঘুরতে গেলে খাদ্যের উচিত সবসময় ব্যবস্থা থাকে না, আর তাই রান্না করা খাবার নিয়ে যাচ্ছেন তাই ভালো হবে। সোনারগাঁওতে চিত্র তোলার জন্য উপযোগী ছবির ক্যামেরা নিয়ে গেলে ভালো হবে কারন অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত অক্ষাংশে তোলা হয়।
সোনারগাঁওর বাইরে রেস্তোরা আছে, তাই তাদের দাম বুঝে নিয়ে যেতে ভালো।
ভ্রমণে সাবধান থাকুন, আপনার দেশের অভিভাবকের সাথে ভালো সম্পর্ক চিন্তা করুন।