গ্রীষ্মের খর প্রকৃতিতে ফুল-ফলের বিপুল সমারোহ। অপরূপ মহিমাভরা পরিবেশ এখন প্রকৃতিতে। প্রকৃতি তো উদার ও মুক্ত। করোনায় প্রাণভরে যেন শ্বাস নিচ্ছে প্রকৃতি। এ প্রকৃতিতে এখন সেজেছে মনমাতানো জারুল ফুল। পাপড়ির নমনীয় কোমলতা, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে এ জারুল ফুল।
জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের থাকে ছ’টি করে পাঁপড়ি, মাঝখানে পুংকেশরের সাথে যুক্ত হলুদ পরাগকোষ। গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরত পর্যন্ত তা দেখা যায়।
জারুল (ইংরেজি: Giant Crape-myrtle, Queen’s Crape-myrtle, Banabá Plant, Pride of India। বৈজ্ঞানিক নাম: Lagerstroemia speciosa) বাংলাদেশের নিম্নভূমির একান্ত অন্তরঙ্গ তরুদের অন্যতম। লেজারস্ট্রমিয়া গণের এই উদ্ভিদ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রজাতি। এটি মধমাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কাণ্ডবিশিষ্ট জারুল ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পত্র বৃহৎ, ৬-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, আয়তাকৃতির মসৃণ ও দেখতে গাঢ় সবুজ।
গাছের পাতা সবুজ, পুরু ও বেশ বড়। গাছের শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড শক্তমানের, শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে দণ্ড বোঁটায় অসংখ্য ফুল ফোটে। বোঁটার নিচ থেকে প্রথম ফুল ফোটা শুরু হয়ে বোঁটার সামনের দিকে ধীরে ধীরে ফুল ফোটে।
জারুল গাছে এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে। ফল পরিপক্ব হয় অক্টোবর থেকে জানুয়ারী মাসের মধ্যে। জারুল গাছ যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় তখন চারদিক ঘ্রাণে মোহিত হয় না বটে, দৃষ্টিনন্দন শোভায় সবারই চোখ আটকে যায়। আকৃতি ভিন্ন হলেও জারুল ফুলের রং সাধারণত কচুরীপানা ফুলের মতো বেগুনী আর সাদার মিশেল।
ফুল শেষে গাছে বীজ হয়, বীজ দেখতে গোলাকার ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়। জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের দেখা মেলে। নিুাঞ্চলের জলাভূমিতে এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তবে শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। ঘরের কড়ি-বরগা, লাঙল, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। জারুল গাছের ভেষজ গুণও রয়েছে। এর বীজ ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল উপকারী।