রাতে ভালো ঘুম হওয়া সুস্থ শরীরের জন্য অপরিহার্য। কখন ঘুমাতে হবে তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ফজরের নামাজের পর ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলেছেন, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। অতীতে, লোকেরা সাধারণত ফজরের পরে জেগে থাকত, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির করা, বই পড়া বা অধ্যয়নের মতো কাজে নিযুক্ত থাকত। এই অভ্যাস ইসলামী শিক্ষার মূলে রয়েছে।
নবী মুহাম্মদ (সা.) তার অনুসারীদেরকে ইশার নামাজের পরে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে এবং সন্ধ্যার নামাজের পরে অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন বা গসিপ এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ফজরের নামাযের পর ঘুমানোকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল যাতে বরকত হাতছাড়া না হয়।
রাসুল (সা.) রাতের প্রথম দিকে ঘুমানোর এবং এশার নামাজের পর অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বা পরচর্চা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। ইশার নামাযের পর অল্প সময়ের জন্য জাগ্রত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেমন ইসলামিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো বা ব্যক্তিগত কাজে কাজ করা।
ফজরের নামাযের পরপরই ঘুমানো সময়ের সাথে সম্পৃক্ত বরকতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। উপকার ও আশীর্বাদ সর্বাধিক করার জন্য এই সময়ে উত্পাদনশীল কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত হওয়া ভাল। প্রারম্ভিক সময়গুলি ধর্মীয় এবং পার্থিব উভয় প্রচেষ্টায় সাফল্য এবং উত্পাদনশীলতার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা সম্পদ ও জ্ঞানের জন্য পূর্বশর্ত। বলা যায় সফলতার চাবিকাঠি। কেননা ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত-বন্দেগী নয়, বরং দুনিয়াবী কাজের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকতময় সময়ে। এজন্য সালফে সালেহীনদের মধ্য থেকে অনেকেই উল্লেখিত হাদীসগুলোর কারণে, ফজরের পরে ঘুমানোকে মাকরূহ মনে করতেন। কেননা ভোর বেলা ঘুমালে রাসূল (সাঃ) যে বরকতের দোয়া করেছেন, সে বরকত থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার এক সন্তানকে ভোরবেলায় ঘুমোতে দেখে বলেছিলেন!ওঠো তুমি কি এমন সময় ঘুমিয়ে আছো, যখন রিজিক বন্টন করা হয় (সূত্র যা’দুল মাআ’দ ৪/ ২৪১)
সুতরাং আমরা এশার পর বিশেষ করে বাড়িতে কোন কাজ না থাকলে বা মেহমান না থাকলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব কিছুক্ষণ স্ত্রীর সাথে গল্পগুজব করা যেতে পারে তবে অহেতুক কোন গল্পগুজব করব না। ফজরের নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার করব তারপর না ঘুমিয়ে হালাল রিজিকের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়বো।
উপসংহারে, ফজরের নামাযের ঠিক পরে ঘুমানোকে ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে যাতে কেউ দোয়া থেকে বঞ্চিত না হয়। একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার আগে এই সময়ে উপকারী কার্যকলাপে নিযুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আল্লাহ আমাদেরকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ সঠিকভাবে অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।