
নগরীতে এবার বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী বহুল আলোচিত শফিকুল আলম গুলজার এবং তার ভাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মারুফ আহম্মেদ জিয়ার বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল করেছে আ. রব সেরনিযাবাত স্টেডিয়াম সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু কলোনীর বিক্ষুব্দ জনতা।
মদ্যপ অবস্থায় গুলজার তার ভাই জিয়ার (প্রতীক ঠেলাগাড়ি) প্রচারণায় নেমে নারী ভোটারদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ ও যৌনাত্মক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন বলে সংক্ষুব্দ নারীদের অভিযোগ। এর জের ধরে গতকাল সন্ধার দিকে দুই শতাধিক নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে ঝাড়ু হাতে এই মিছিল বের করে।
পরবর্তীতে তারা বরিশাল জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোর সম্মুখে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। অস্ত্রবাজী, টেন্ডার ত্রাস, জমি দখল, সরকারি কর্মচারী গুম, আইনজীবি হত্যা, প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা- এই সবগুলো উদাহরণ যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে সেই সফিকুল আলম গুলজারের বিরুদ্ধে এবার নারীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল।
সংক্ষুব্ধ নারীরা জানিয়েছেন, শফিকুল আলম গুলজার তার ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী মারুফ আহম্মেদ জিয়ার পক্ষে শনিবার সন্ধ্যার দিকে স্টেডিয়াম কলোনীতে প্রচারণায় নামেন। ওই সময় মাতাল অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকজন নারীর সাথে অশ্লীল আচরণ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এমনকি এক নারীকে যৌনাত্মক কুরুচি মন্তব্য করার পাশাপাশি শ্লীলতাহানীও করেন। এই ঘটনায় ফুঁসে ওঠে বঙ্গবন্ধু কলোনীবাসী। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গুলজার এবং তার ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী জিয়ার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল বের করা হয়।
এদিকে গুলজারের সহযোগী সামসু, রাজু ও সাগরসহ অর্ধশত ক্যাডার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারের ভিতর সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে। এ হামলায় মহানগর যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ইমন ও আসিফ ইকবাল শাওন, নারীসহ প্রায় ২৫ জন গুরুতর আহত হয়। আহদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
তবে গুলজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সন্ত্রাসের আরেক গডফাদার তার ছোট ভাই যুবদল নেতা মাহবুব আলম মেহেদী র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর কিছুদিন থেমে থাকলেও কালের আবর্তে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্বরুপে বহাল তবিয়তে রয়েছেন ক্রাইমজোনের কিং গুলজার। পাহাড় সমান তার অপকর্ম জমা হলেও বারবারই রহস্যজনক কারনে পার পেয়ে যাচ্ছে সে। তার নির্যাতনের শিকার মানুষেরা হয় নগরী ছাড়ছেন নয়তো সব সহ্য করে চুপ করে রয়েছেন।
১৯৮০ সালে টেন্ডরবাজীতে নাম লিখে আলোচনা সমালোচনাতে উঠে আসে সফিকুল আলম গুলজার। জানা গেছে, নগরীর কাটপট্টি রোডের সাবেক আরওরা মার্কেট অথাৎ পূনাম হোটেলের মালিক কলেজ রো এলাকার বাসিন্দা একেএম হাবিবুর রহমানের সাথে প্রতারণা করে ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসের ৩০ তারিখ হোটেলসহ সাড়ে নয় শতাংশ জমি নামমাত্র ক্রয়মূল্য দিয়ে দখল করে নেয় গুলজার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সনে হাবিবুর রহমান ও তার পরিবার বরিশাল কলেজ রোড় এলাকাতে বসবাস করছিল। তৎকালীন সময় সেখান থেকেও নানা ষড়যন্ত্র করে তাড়িয়ে দেয় গুলজার ও তার ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী বাহিনী। পরবর্তিতে বাধ্য হয়ে বরিশাল ছাড়তে হয় হাবিবুর রহমানকে। বরিশাল ছেড়ে ঢাকাতে বসবাস করেন হাবিবুর রহমানের পরিবার।
হাবিবুর রহমানের ছেলে সুমন জানান, নগরীর বগুড়া আলেকান্দা মৌজার এস.এ.৩৩২২,৩৩২৫ এর নতুন সৃজিত ৪৬৬৯ নং খতিয়ানের হাল ৩৩৫৬ ও ৩৩৫৭ নং দাগের সাড়ে নয় শতাংশ জমি দলিল করে নিতে পারলেও গুলজার অবশিষ্ট ২ শতাংশ জমি দখলে আছেন। কিন্তু দলিল করে নিতে পারেননি। বর্তমানে ওই বাকী ২ শতাংশ জমির দখল করে আছেন। জমির মালিককে ফেরৎ দিতে নারাজ গুলজার। উল্টো বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন বলে দাবী হাবিবুর রহমান এর পরিবারের।
২০০৩ সনে জমি উদ্ধারের জন্য বরিশাল সিটি করর্পোশনের মেয়র বরাবর একটি লিখিত আবেদন করলেও রহস্যজনক কারনে বিষয়টি ধামাচাপা পরে যায়। সরকারী বিভিন্ন দপ্তর জমি উদ্ধারের জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোন কাজ হয়নি। উল্টো নিজের জীবন নিয়েই শঙ্কায় পড়তে হয়েছে।
ঠিক ওই বছরেরই ২৫ নভেম্বর গভীর রাতে এই ঠিকাদার ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল আলম গুলজারকে অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২৪ নভেম্বর মধ্যরাতে অভিজাত বরিশাল ক্লাবে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্ত হয়ে ক্লাবের সেক্রেটারি জাকারিয়া মান্নাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এ সময় অন্য কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে সে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তাহের শফিকুল ইসলামের লাইসেন্সের আগ্নেয়ান্ত্রের গুলির হিসাব যাচাই-বাছাই করতে নগরীর কাটপট্টি এলাকা থেকে তার মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল অ্যাথেনায় যান। ফাঁকা গুলি করে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করা এবং গুলির সঠিক হিসাব দিতে না পাড়ায় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল গুলজার।
গতকাল বঙ্গবন্ধু কলোনীতে নারী ভোটারদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ ও যৌনাত্মক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং তার সন্ত্রাসীদেও মাধ্যমে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে আবারও আলোচনায় চলে আসেন গুলজার।জানতে চাইলে বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করে শফিকুল আলম গুলজার বলেন, ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণায় নামার বিষয়টি প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মানতে পারেনি। ষড়যন্ত্র করে তাকে মাঠছাড়া করার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।