মাদারীপুরে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। সোমবার ১২টার সময় বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। জেলা প্রশাসক প্রধান শিক্ষককে এক সপ্তাহের ছুটি প্রদান করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে জানান।
সারেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে মাদারীপুর সদর উপজেলার ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা স্কুল মাঠে জড়ো হয়ে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। এ সময় বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন। মিডিয়াকর্মীরাও উপস্থিত হলে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক কৌশলে স্কুল থেকে সরে পড়েন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের টিফিন দেয়া বাবদ বিগত ৭মাসে তাদের থেকে ৭ লক্ষ টাকা তুলেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের টিফিন দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন। টিফিনে সিংগারা পুড়ি ইত্যাদি দেয়া হলেও ভাউচারে লেখা হয় বার্গার, কেক এবং স্যান্ডউইচ। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক তার উদ্যোগে একজন লোক নিয়োগ দিয়ে তাকে দিয়ে চটপটির ব্যবসা করেন। চটপটি বিক্রির আয় ব্যয় তিনি নিজে দেখাশোনা করেন। শিক্ষার্থীদের স্কুল গেটের বাইরে যেতে দেয়া হয় না, বাধ্য হয়েই তাদের চটপটি কিনে খেতে হয়। নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর চটপটি খেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বমি করা ছাড়াও নানা রকম পেটের পিড়া জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফা বলেন, ‘আমাদের ছাত্রী হোস্টেলে কোন ছাত্রীকে থাকতে দেওয়া হয় না। প্রধান শিক্ষক তার বাসভবন ওকেজো দেখিয়ে ফ্যামিলি নিয়ে ছাত্রী হোস্টেলে থাকেন। আরেকটি কক্ষতে তার চটপটি বিক্রেতাকে থাকতে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই।’
দশম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, আইসিটি ল্যাব বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের আইসিটি ল্যাবে ৮মাসেও কোন ক্লাস নেয়া হয়নি। আমরা তার অপসারণ চাই।’
নবম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী লাবণ্য খান বলেন, আমাদের এক দফা এক দাবি, আমরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই। আমাদের থেকে টিফিনের ডাবল টাকা নেয়া হয়েছে, তাতেও আমাদের আপত্তি ছিল না যদি আমাদের টিফিন দিত। আমাদের যাতে টিফিন খেতে দেয়া না লাগে সেজন্য বেশিরভাগ সময় টিফিন পিরিয়ডে আমাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এক মাসে আমাদের একদিন মাত্র টিফিন খেতে দেয়া হয়েছে। তাও মাত্র সিঙ্গারা পুড়ি। বিদ্যালয়ের একমাত্র টেনিস ক্লাব প্রধান শিক্ষকের লোক দ্বারা অবরুদ্ধ। সেখানে কোন ছাত্রী খেলতে গেলে তাদের বকাঝকা করে বহিরাগত ভাড়াটিয়ারা বের করে দেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী শিক্ষক জানিন, প্রধান শিক্ষক প্রায় স্কুলে থাকেন না। দাপ্তরিক কাজের নামে বিনা ছুটিতে ঢাকায় পরিবারের সাথে সময় কাটান। বিগত ৮ মাস কার্যকালে ক্লাস নেয়ার জন্য মাত্র একটি মার্কার দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। আমাদের শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের অভিযোগ শুনে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করার আশ্বাস দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটির থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয় পাঠাবেন এবং প্রধান শিক্ষককে এক সপ্তাহের ছুটি প্রদান করেছেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকেরা পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেন। শিক্ষার্থীদের থেকে অভিযোগ শুনে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মারুফুর রশিদ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের আশ্বাস দেন এবং প্রাপ্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষককে এক সপ্তাহের ছুটি প্রদান করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে এটা শিক্ষকদের ষড়যন্ত্র। তারা তাদের অনিয়ম ঢাকার জন্য শিক্ষার্থীদের আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমি আপনাকে আমার পক্ষে সকল ডকুমেন্ট দেখাতে পারবো।
তবে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ মারুফুর রশিদ এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।