নামের মিল থাকায় ২মাস ধরে ফরিদপুর কারাগারে ঝালকাঠির ফিরোজ আলম

প্রকাশিত: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২৩ | আপডেট: ৭:৪৪:অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২৩

কথায় আছে ‘নামে নামে যমে টানে।’ এর প্রমান মিলেছে ঝালকাঠির নলছিটিতে। ডাকাতি মামলার আসামি আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল নামের সাথে মিল থাকায় নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া চৌমাথা বাজার এলাকার মো.ফিরোজ আলম হাওলাদার(৪৬) নামে এক নিরপরাধ ব্যক্তি অন্যের ডাকাতি মামালায় দুই মাস ধরে ফরিদপুরে কারাবন্ধী আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিবারের অভিযোগ প্রকৃত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল পলাতক রয়েছেন। তাঁরা উভয়ই একই এলাকার বাসিন্দা এবং নাম ও বাবার নামের সাথেও অংশিক মিল রয়েছে। বিনাদোষে কারাবন্ধী অভিযোগ করে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দ্রæত নিঃশর্ত মুক্তির দাবী করেন মো.ফিরোজ আলম হাওলাদারের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বামীর মুক্তির দাবী জানান তিনি। এসময় ফিরোজ-সুরাইয়া দম্পতির সন্তানরাও উপস্থিত ছিলেন।
সুরাইয়া জানান, গত ৮মার্চ বরিশাল র‌্যাব-৮ এর মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া চৌমাথা বাজার থেকে মো.ফিরোজ আলম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতেই তাঁকে নলছিটি থানায় সোপর্দ করা হয়। র‌্যাব প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, সে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সংঘটিত ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতির মামলায় সে আসামি। সেই মামলায় ২০১০ সালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল (৫০) কে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৩৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।
মামলার নথি ও অদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসল আসামির নাম ফিরোজাল ওরফে জুয়েল (৫০)। মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম প্রথমে জুয়েল লেখা হয়। পরে অভিযোগপত্রে ফিরোজাল ওরফে জুয়েল লেখা হয়। সেখানে তাঁর বাবার নাম লেখা হয় মৃত নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নু মিয়া। ঠিকানা দেওয়া হয় নলছিটির উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখীয়া গ্রাম। সে ২০০৩ সালে ফরিদুুরের ১ম যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারাধীন একটি মামলায় ৭ মাস কারাভোগ করে জামিন নিয়ে পলাতক থাকে। পরে সেই মামলায় সে খালাস পায়। ২০০৭ সালের ওই বাস ডাকাতির মামলায় পুলিশ তাঁকে আসামি করে। সেই মামলায় সে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
অপরদিকে বর্তমানে সেই ডাকাতি মামলায় কারাগারে থাকা নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. ফিরোজ আলম হাওলাদার ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রæয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজারে অবস্থিত আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়কের চাকুরি করেন।
এদিকে ফিরোজ আলম কারাগারে থাকায় তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম (৩৫) চারটি মেয়ে সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি বৈশাখীয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এলাকাবাসির অভিযোগ ফিরোজ আলমকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করার পর থেকে প্রকৃত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়ে আছে। সেই ডাকাতির মামলায় ফরিদপুরের আইনজীবী স্বপন সাহা গত ২৩ মে ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফিরোজ আলমের জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকুরীরত প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়নসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন থানা ও আদালতের তলবীর (কোন মামলা নেই) মাধ্যমে প্রমাণ করা চেষ্টা করেন সে নির্দোষ। এই ফিরোজ আলম হাওলাদার ও ফিরোজাল ওরফে জুয়েল একই ব্যক্তি নয়। আদালত তাঁর আইনজীবীর আবেদন সন্তুষ্ট হয়ে গ্রহণ করেন। আদালত নির্দোষ ফিরোজ আলমকে পরোয়ানা না থাকা সত্বেও কেন এ মামলায় আটক করা হলো তা সঠিক তদন্ত করে ৩০ মে এর মধ্যে নলছিটি থানার ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত আদেশে আরও উল্লেখ করেন, কাগজপত্র পর্যালোচন করে দেখা যায় ফিরোজ আলম ফরিদপুরের কোন মামলায় কখনও আসামি হননি কিম্বা আটক বা গ্রেপ্তার হননি। তিনি কখনো জেল/জরিমানারও শিকার হননি।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. আতাউর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানিয়েছেন, এ মামলায় আটক ফিরোজ আলমই আসল আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল।
এ বিষয়ে ফিরোজ আলমের আইনজীবী স্বপন সাহা মুঠোফোনে বলেন, তদন্তে নাম–ঠিকানা সঠিকভাবে যাচাই না হওয়ায় প্রকৃত আসামি আড়ালে থেকে গেছে। আমরা পুলিশের এ প্রতিবেদেনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দায়ের করবো।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. আতাউর রহমান বলেন, যেদিন আসামি গ্রেপ্তার হয় সেদিনই ফিরোজ আলম পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। আমাদের প্রতিবেদন আদালত যাচাই বাচাই করে সিদ্ধান্ত দিবে।
ফিরোজ আলমের প্রতিবেশী ফোরকান সরদার (৫০) বলেন, ফিরোজ আলম একজন ভালো মানুষ। সে ডাকাতির সাথে জড়িত থাকতে পারেনা। এ ঘটনায় আসল অপরাধীকে আড়াল করে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।
ফিরোজ আলমের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী নির্দোষ। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় সে এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমি সন্তানদের নিয়া কষ্টে আছি। আমার স্বামীকে মুক্তি দিন।

Print Friendly, PDF & Email