তদন্ত প্রতিবেদন, ইঞ্জিনরুমের গ্যাস থেকে সাগর নন্দিনী ২ এ বিস্ফোরণ
মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু
সিনিয়র সাংবাদিক

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ এ বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকএন্ডর ঘটনায় ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত টিম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ইঞ্জিনরুমে জমে থাকা গ্যাস থেকেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.রুহুল আমিন। প্রতিবেদনে দগ্ধ শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের মতামত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দফায় তেল অপসারণের জন্য ইঞ্জিনরুমের জেনারেটর চালু করার সাথে সাথেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি নিয়ে আসা এবং কয়েক দিন নোঙর করে রাখার সময় গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেছে। তবে বিস্তারিত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
তেলবাহী সাগর নন্দিনী–-২ জাহাজটি প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রল ও ডিজেল) নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে এসে গত ২৫জুন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী তীরের পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তেলের ডিপো-সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপো বন্ধ থাকায় তেল খালাস করা যায়নি।
শনিবার (১জুলাই) বেলা দুইটার দিকে নন্দিনী-২ এর ইঞ্জিনরুমে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন মারা যান এবং চারজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণের পর গত রোববার নন্দিনী-২ থেকে ওটি মৃদুলা জাহাজে তেল অপসারণ করা হয়। এরপর গত সোমবার নন্দিনী-২ থেকে সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে তেল অপসারণের কাজ শুরু হয়। এ সময় নন্দিনী-২ তে আবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১০পুলিশ সদস্যসহ ১৫জন আহত হন।
দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের আগে নন্দিনী-২ জাহাজে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রল ও ২৮ হাজার ৪৫৬ লিটার ডিজেল ছিল বলে পদ্মা অয়েল কর্তৃপক্ষের দাবি। বিস্ফোরণের পর সারা রাত আগুন জ্বলার কারণে অনেক তেল পুড়ে গেছে। বর্তমানে কী পরিমাণ তেল রয়েছে তা জানাতে পারেনি পদ্মা অয়েল ও সাগর নন্দিনী জাহাজ কর্তৃপক্ষ। পানিমিশ্রিত তেল ব্যবহার উপযোগী আছে কি না, তা জানার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, ‘কয়েকটি জাহাজে তেল অপসারণ করা হয়েছে। নন্দিনী-২তে কী পরিমান তেল এখনো আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানিমিশ্রিত তেল পরীক্ষা করে জানা যাবে। এ বিষয়ে উদ্ধার কমিটি কাজ করছে।’
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র উপসহকারী পরিচালক ফিরোজ কুতুবী জানান, জাহাজে থাকা অবশিষ্ট তেল অপসারণে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও নির্দেশনা ছাড়া তা এখনই অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে পানি উঠে যাতে ডুবে না যায়, সে বিষয়ে তৎপরতা অব্যাহত আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে পানি ও ফোম মিশ্রিত তেল অপসারণের জন্য আট সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এই কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী জানান, তেলমিশ্রিত পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জাহাজটি যাতে ডুবে না যায়, এ জন্য ড্রেজার দিয়ে পেছনের অংশ থেকে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। তবে তেলের চেম্বারগুলোর ওপরের অংশ ফাটল থাকলেও নিচের অংশ অক্ষত রয়েছে।
নন্দিনী–-২ এর পাশে থাকা তেলবোঝাই নন্দিনী-৪ জাহাজটিও ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামুন শিবলী। তিনি বলেন, নন্দিনী-৪ এ থাকা তেল অপসারণের জন্য নন্দিনী-১ নামে একটি জাহাজ আনা হয়েছে। নন্দিনী-৪ এর সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বিস্ফোরক দল পরীক্ষানিরীক্ষা করছে এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পানি ছিটাচ্ছে।
জাহাজটিতে এখনও ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রোল ও ২৮ হাজার ৪৫৬ লিটার ডিজেল রয়েছে রয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফোম ব্যবহার ও বৃষ্টিতে খোলা থাকা তেলের চেম্বারে অবশিষ্ট তেলের সাথে পানি মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়া ঘটনার দিন সারা রাত আগুন জ্বলার পর কতটুকু তেল রয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত সাগর নন্দিনী-২ থেকে সোমবার সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে জ্বালানি সরিয়ে নেওয়ার সময় দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।