সুগন্ধায় তেবাহী জাহাজে ফের বিস্ফোরণ ১১ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে দমকল বাহিনীর ১২ ইউনিট
মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু
সিনিয়র সাংবাদিক

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরণ হওয়া তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ থেকে তেল খালাস করার সময় ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় ১০জন পুলিশ সদস্যসহ ১৫জন দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের পৌর খেয়াঘাট এলাকায় সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে এ দূর্ঘটনা ঘটে। দমকল বাহিনীর ১২টি ইউনিট দীর্ঘ ১১ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে আগুন সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। নিয়ন্ত্রণহীন আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নদী তীরবর্তি বাসিন্দাদের মধ্যে। জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ও পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল সার্বিক বিষয়ে তদারকি ও নির্দেশনা দেন। এর ফলে নদী তীরবর্তি আতঙ্কিত বাসিন্দারা গৃহপালিত প্রাণি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে স্টেডিয়াম সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ফাজিল মাদ্রাসায় রাত্রি যাপন করে।
ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৫জনকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিলে গুরুতর আহত ২ পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়(শেবাচিম) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক পুলিশ সদস্যসহ দুজনকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করেছে শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অপরজন বরিশালেই চিকিতসাধীন রয়েছে। বাকি ১১জন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে শরীরের প্রায় ৬০% দগ্ধ হওয়া আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, ঝালকাঠি পুলিশ লাইনে কর্মরত কনেষ্টবল শওকত জামিন (২৪) ও দীপ সমাদ্দার (২৫)। অপরজন সুকানী শরীফ আহমেদ (৩৫)। আহতদের মধ্যে কনেষ্টবল শওকত জামিন (২৪) ও জাহাজের স্টাফ শরীফ আহমেদ (৩৫) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনষ্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
আহত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের বাবুর্চি বেলাল হোসেন জানান, একটি পাম্প সচল করে ৪/৫ঘণ্টা কাজ করা যায়। সেখানে অতিরিক্ত সময় সচলাবস্থায় কাজ করায় পাম্প গরম হয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। আমি ছিলাম রান্নার কাজে, আগুন দেখেই নদীতে লাফিয়ে পড়ি। ওই সময়ে নৌবাহিনীর দুজন গোসল করতে ছিলো। তাদের কোন সন্ধান এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য গত শনিবার (১জুলাই) দুপুর ২টায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে সাগর নন্দিনী-২ তেলবাহী ট্যাংকারটিতে আগুন লাগে । এতে দগ্ধ ৪জন শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে। সোমবার দুপুর ২টার দিকে নিখোঁজ ৪ জনের মৃত দেহ ও ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হয় । বিস্ফোরিত জাহাজে ১১লাখ লিটার ডিজেল ও পেট্রোল বোঝাই ছিলো । ইতঃমধ্যে ঝালকাঠি ডিপোতে রোববার প্রায় ৭লাখ লিটার তেল অপসারণ করা হয়েছে। ওই স্থানে সাগর নন্দিনী-২ ও সাগর নন্দিনী-৪ নোঙ্গর করা ছিল। সোমবার বাকি তেল অপসারণ করার সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাগর নন্দিনী-২ তে ফের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুলিশ, নৌবাহিনীর সদস্য, জাহাজ স্টাফরা লাফালাফি-ছুটাছুটি করলে দগ্ধ, আহত ও নিঁখোজ রয়েছে অনেকে।
আহত এক পুলিশ সদস্য জানান, আমরা জাহাজের পাশেই ট্রলারে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হওয়ায় আমাদের ট্রলারের চালকও নদীতে লাফিয়ে পড়ে। আমরা মহাবিপদের মধ্যে পড়ে যাই। ট্রলারটিকেও সরাতে পারছিলাম না। আগুনের তাপ প্রচন্ডভাবে আমাদের শরীরে লাগে। জীবন বাঁচাতে আমরাও যে যার মতো করে নদীতে লাফিয়ে পড়ি।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিতুল ইসলাম জানান, সুগন্ধা নদীতে ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ ও আহত ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৫জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় অগ্নিকান্ডে ঝালকাঠি, বরিশালসহ দমকলবাহিনীর ১২টি ইউনিট দীর্ঘ এগারো ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে আগুন সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। নদী তীরবর্তি বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য রাতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম সংলগ্ন মসজিদবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছিলো।
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, সুগন্ধা নদীতে ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ ও আহত ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৫জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে আলাদা ইউনিট চালু করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যসহ ৩ জনকে বরিশাল শেরই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ১২জনকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগীদের সার্বিক চিকিতসার বিষয়ে আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু এমপি মহোদয় সার্বক্ষণিক খোজ খবর নিচ্ছেন বলেও জানান সিভিল সার্জন।