রাজাপুরের সড়ক প্রশস্ত করণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ | আপডেট: ৬:৪০:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩

বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলাধীন সাড়ে ৮কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করণ কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজ’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রশস্তকরণ কাজে নি¤œমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করায় পুরানো মজবুত রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
১৮ফুট প্রশস্ত প–রানো রাস্তাটি বর্ধিতকরণ প্রকল্পে বর্তমানে উভয় পাশে ৩ফুট প্রশস্ত করে ৬ফুট বেড়ে বর্তমানে রাস্তার প্রস্থ দাড়িয়েছে ২৪ফুট। পদ্মা ব্রিজ চালু হবার ফলে সড়ক যোগাযোগ ও যান চলাচল নির্বিঘœ করতে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠির রাজাপুর অংশ ৮.৫৯২কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় উভয় পাশে ৩ফুট করে মোট ৬ফুট ইটের সলিং এর কাজ চলছে। ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ এ প্রশস্তকরণ কাজে ৪ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্ধে এ কাজের বাস্তবায়ন করছেন মো. ফারুক হোসেন এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজ ।
ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রাজাপুরের মেডিকেল মোড় থেকে পার্শ্ববর্তি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সীমান্ত শিয়ালকাঠি ব্রিজ পর্যন্ত (রাজাপুর অংশে) ৮.৫৯২কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। ২১ ইঞ্চি গভীর করে নীচে বালু দিয়ে সমান করে ৩ স্তরের ইট বিছিয়ে পাশের এজিং (ইটের সারি) এবং মাটি দিয়ে এজিং মজবুত ও শক্ত করানোর কথা কার্যাদেশে উল্লেখ করা হয়। এতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয় সাড়ে ৪কোটি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপরিভাগে ইটের সলিংয়ে ভালোমানের ও সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরে নি¤œ মানের ৩নম্বর-৪নম্বর ইট ফাকা ফাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি ইটের দূরত্ব থাকছে দেড় থেকে ২ইঞ্চি। বেকু মেশিন দিয়ে খনন কাজ করানোর ফলে সঠিক মাপে (২১ ইঞ্চি) গর্ত হচ্ছে না। ১৫/১৬ ইঞ্চি গর্ত করেই বালু ফেলে সমান করে ইট বিছানো হচ্ছে। দুটি গাড়ি ক্রসিং (অতিক্রম) করার সময় পুরানোর পিচ ঢালাই করা সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তার পাশের মাটি খনন করে পাশ্ববর্তি জমিতে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশে থাকা জমির মালিকদের ফসল ও ফসল রক্ষার বেড়াও। এতে স্থানীয়দের ক্ষোভ বেড়েই চলছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. জুয়েল জানান, ইট-ভাটায় ভালো ইটের অর্ডার করা হয়েছে । ট্রাক নিয়ে গেলে তারা যেভাবে ইট দেয়, সেগুলোই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের মাঝে যাতে ভালোভাবে বালু ঢুকে আটকে থাকতে পারে এজন্য ফাকা রাখা হচ্ছে। যেহেতু বেকুর মেশিন দিয়ে খনন করা হচ্ছে তাই সবজায়গার মাপ সমান হচ্ছে না। আমাদের সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত পিচ ঢালাইয়ের রাস্তা সিলকোড দিয়ে সংস্কার করা হবে। ২০১৯ সালের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে সে অনুযায়ী কার্যাদেশ পেয়েছি। এখন সব জিনিসেরই দাম বেশি, তাই আমাদের ব্যায়ও অনেক বেশি হচ্ছে।
কাজের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. ফখরুল ইসলাম জানান, রাজাপুরের মেডিকেল মোড় থেকে পার্শ্ববর্তি শিয়ালকাঠি ব্রিজ পর্যন্ত (রাজাপুর অংশে) ৮.৫৯২কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। ২১ ইঞ্চি গভীর করে নীচে বালু দিয়ে সমান করে ৩স্তরের ইট বিছিয়ে পাশের এজিং (ইটের সারি) এবং মাটি দিয়ে এজিং মজবুত ও শক্ত করানোর কথা কার্যাদেশে উল্লেখ করা হয়। এতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয় ৪কোটি টাকারও বেশি। পিরোজপুর ও ঝালকাঠির যৌথ কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯কোটি টাকা। তাই রাজাপুর অংশে ৪কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে মুঠোফোনে সঠিক তথ্যটি জানাতে পারেননি তিনি।
কাজের মানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, প্রতিটি ইটে সামান্য ফাকা থাকবে বালু ঢোকার জন্য কিন্তু দেড়/দুই ইঞ্চি ফাঁকা রাখতে পারবে না। সঠিকভাবে গভীর করে ভালোমানের ইট দিয়ে কাজ করানোয় কার্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে। তাদেরকে অনেকভাবে বললেও শ্রমিকরা কোন কথা না শুনেই যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কাজ করছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email