ম্যানেজার হওয়ার যোগ্যতা ও গুরুত্বপূর্ণ টিপস

জি এম নিউজ জি এম নিউজ

বাংলার প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০২২ | আপডেট: ৪:০২:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০২২

একজন দক্ষ ম্যানেজার, দক্ষ সমণ্বয়কারীও বটে। বিভিন্ন সূত্র থেকে তার কাছে খবর আসে এবং তিনি সেই খবর সঠিকভাবে টিমের কাছে পৌঁছে দেন। তিনি যেমন নির্দেশ দেন তেমনি অন্যদের কাছ থেকে সমস্যাসম্পর্কেও মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং দ্রুত সমাধান করেন। টিমের প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার কাছে এসে কথা বলতে পারে তিনি সে সুযোগ রাখেন

কিছুদিন পূর্বের একটি জরিপে দেখা গেছে, দক্ষ একটি দল নিয়ে উপযুক্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ার ৭০% ব্যবস্থাপকের (Manager) উপর নির্ভর করে। মনে রাখবেন, ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। একই সাথে কষ্টসাধ্যও বটে। এর জন্য আপনার জনবল ও উপাদান ব্যবহার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।

সুষ্ঠ বিচার দক্ষতা ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন ব্যবস্থাপকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ। যেখানে অধিকাংশ পেশাদারী ব্যবস্থাপকেরা তাদের সিদ্ধান্তের ফলাফল নিয়ে চিন্তা করেন, সেখানে সিদ্ধান্তের ফলাফলের চেয়ে কাজটা কীভাবে করা হবে, তাতে উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া যাবে কিনা সেদিকে দৃষ্টিপাত করা বেশি জরুরি।
হতে পারেন একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক

একজন ব্যবস্থাপকের কোনো সমস্যার গভীরে গিয়ে বিবেচনা করতে পারা ও বিভিন্ন পছন্দের মধ্যে তুলনা করতে পারার গুণ থাকতে হয়। আপনি যদি উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করে কর্মজীবনে একজন ভালো ব্যবস্থাপক হতে চান, তবে এই ৬টি পরামর্শ আপনার জন্য।

১. দূরদর্শিতা
একজন ব্যবস্থাপকের দলকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়। সেই দলের কর্মক্ষমতা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের দূরদর্শিতা থাকতে হয়।

২. সময়ের সদ্ব্যবহার
প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির কথা চিন্তা করে কোনো কাজ শুরু করতে খুব বেশি তাড়াতাড়িও যেন না হয়, আবার যেন খুব বেশি দেরিও না হয় সেজন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা থাকতে হবে। এই তিনটি গুণাবলি অর্জন করলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পাশাপাশি, আপনার দলকে দিক নির্দেশনা দিয়ে সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

 

৩. নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা
নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারা একজন ব্যবস্থাপকের অন্যতম গুণ। গুগলের (Google) গবেষণা অনুযায়ী, একজন ভালো ব্যবস্থাপকের প্রধান গুণ হলো লক্ষ্য ও কৌশল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা।
লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা শুধুমাত্র কাজের দিক নির্দেশনার জন্য জরুরি না, পাশাপাশি কর্মীদের কাজের উদ্যম বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে, প্রতিটি কর্মীর কাজ নির্দিষ্ট করে দেবার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়সীমার মাঝে ছোট ছোট কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিতে হয়, যাতে কর্মীদের কাজের অগ্রগতি দ্রুত হয়। একবার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলে ম্যানেজার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে কর্মীদের কাজের তদারকি করে, তাদের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনা করা।

 

৪. সঠিক কর্মীকে সঠিক কাজ দেওয়া
ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায়, অন্যদেরকে দিয়ে কাজ আদায় করে নেওয়া। এক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ কাজটির দায়ভার যেন একজনের উপর না পড়ে সেদিকে ব্যবস্থাপকের খেয়াল রাখতে হয়। কাজের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের পর ব্যবস্থাপকের উপর যে দায়িত্বটি পড়ে তা হলো কাজ বন্টন।
একটি প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মী কাজ করেন। তারা একেকজন একেকটি কাজে দক্ষ। তাই একজন ভালো ব্যবস্থাপকের কাজ হবে দক্ষতা অনুসারে কর্মী নির্ধারণ। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপককে কর্মীর কর্মদক্ষতা, কাজ করার ধরণ, মানসিকতা সবকিছু বিবেচনা করে কাজ দিতে হবে। কেননা উপযুক্ত কর্মীর হাতে তার উপযুক্ত কাজ পড়লে লক্ষ্যে পৌঁছানো যেমন সহজ হয়ে যায়, তেমনি কাজটা ভালোও হয়।

৫. নিয়মিত কাজের আপডেট নেওয়া
অনেক ব্যবস্থাপক সহকর্মীর অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ভয় থেকে কাজের আপডেট নিতে লজ্জা পান। কিন্তু নিয়মিত আপডেট নেওয়াই লক্ষ্যে পৌঁছানো ও কাজে উন্নতি করার জন্য খুবই জরুরি। একজন ব্যবস্থাপকের প্রাতিষ্ঠানিক সাক্ষাতকারের মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার চেয়ে প্রতিদিনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে হবে। এই নজরদারির সময় কাজ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য কর্মীদের জানাতে হবে, যাতে তারা তাদের কাজ সম্পর্কে অনুপ্রাণিত হন, পাশাপাশি কাজটা আরো নিখুঁত হয়।

এই লক্ষ্য রাখার ক্ষেত্রে একজন সহকর্মীকে সাথে রাখতে পারেন, যে আপনার ভালো মন্দ বিবেচনা করে আপনার কাজের নিরপেক্ষ বিচার করতে পারবেন। ফলে আপনি নিজের কাজের একটি সুষ্ঠ বিচার পাবেন, যা দেখে আপনি কাজকে আরো নিখুঁত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে উদার মনের, যাতে অন্যদের মতামত ঠান্ডা মাথায় বিচার করে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

৬. কাজের প্রতিচ্ছবি দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখা
অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া ব্যবস্থাপকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদিও বর্তমানের কাজ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়, তারপরও পুরোপুরি গভীরভাবে শিক্ষা অর্জনের জন্য অতীতের অভিজ্ঞতা খুবই জরুরি। এজন্য আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় রাখতে হবে। তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার সময়ও থাকবে না। এর ফলে অতীতের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি বারবার হতেই থাকবে।
জীবনের বেশ কিছু মূল্যবান শিক্ষা বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করলে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কর্ণেল পল রিসে বলেন, “আপনি যদি কিছুটা সময় অপেক্ষা না করে একটি কাজ থেকে আরেকটা কাজে নেমে পড়েন, তবে আপনার কাছে চিন্তা করার সুযোগ থাকবে না। পাশাপাশি, কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল- সেটা বিবেচনা করাও সম্ভব হবে না।”

 

ব্যক্তিগত জীবন ও সংগঠন দুটি ক্ষেত্রেই কাজের প্রতিচ্ছবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের কাজের অগ্রগতির দিকে খেয়াল রাখার জন্য প্রতি সপ্তাহ শেষে কাজের অগ্রগতি ও নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানো গিয়েছে কিনা তার দিকে নজর রাখতে হবে। এর ফলে, নিজের অগ্রগতি সম্পর্কে নিরপেক্ষ ধারণা পাওয়া যায়। এই নিজস্ব বিবেচনা আপনার কাজে ভুল ত্রুটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে পারে, পাশাপাশি আপনার সংগঠনের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

 

আপনি যখন আপনার কর্মীদের কাজকর্ম যাচাই বাছাই করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো এখানে সময়ের নির্দিষ্টতা থাকা যাবে না। প্রতিটি কর্মীর কাজকর্ম সম্পর্কে যতটুকু বলার ঠিক ততটুকুই বলতে হবে। পাশাপাশি, তাদের বক্তব্য শুনতে হবে। এভাবেই, কাজের প্রতিচ্ছবি দেখার জন্য উপযুক্ত সময় হাতে রেখে কাজ করলে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব সহজ হয়ে যাবে।

 

এই হলো, ভালো ব্যবস্থাপক হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ৬টি ধাপ। এই ধাপগুলো মেনে চললে আপনি কর্মজীবনে ব্যবস্থাপক হিসেবে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবেই, পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আপনার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা দিনকে দিন আরো সমৃদ্ধ হবে।

কার্টেসিঃ সংগৃহীত

Print Friendly, PDF & Email