বরগুনার আমতলী ও তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। দুর্ভোগে দুই উপজেলার মানুষ । তিন ঘন্টা পায়রা নদীর ফেরি চলাচল বন্ধ।

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁতে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীর চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমতলী পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে সোমবার তিন ঘন্টা ফেরি চলাচলা ছিল। আমনের বীজতলা ও খেত পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। অতিবর্ষনে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পরেছে। এতে দুর্ভোগে পরেছে দুই উপজেলার মানুষ।
জানাগেছে, সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁতে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীর চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরের বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ী তলিয়ে গেছে। তারা অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। অতি বর্ষণে আমতলী ও তালতলীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা ও খেত। জলকপাটগুলো দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন না হওয়ায় উপজেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষকরা। এতে আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদি জমির চাষাবাদ প্রায় বন্ধ রয়েছে। পানি নিস্কাশন না হলে আমনের চাষাবাদ ব্যহত হবে। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা। এদিকে জোয়ারের পানিতে বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম ঘটখালী, গুলিশাখালী ও হরিদ্রবাড়িয়া এলাকার পায়রা সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ না থাকায় গাজীপুর বন্দর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ী কালাম হাওলাদার। অপর দিকে আমতলী পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। মানুষ বুক পরিমান পানি ডিঙ্গিয়ে সড়কে উঠছে। দ্রুত পায়রা ফেরির গ্যাংওয়ে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সোহেল রানা ও শাহিনুর বেগম।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাচিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের সকল আউশ ধানের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। জলকপাটগুলো দিয়ে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া তালতলীর নিশানবাড়িয়া, ফকিরহাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেতুঁলবাড়িয়া, আশার চর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী, জয়ালভাঙ্গা,পচাঁকোড়ালিয়া ও আমতলীর ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরীঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ার চর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, আঙ্গুরকাটা, গুলিশাখালী ও হরিদ্রবাড়িয়া নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সকল এলাকার মানুষের ঘর বাড়ী জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
লেমুয়া গ্রামের ইসহাক হাওলাদার বলেন, অতি বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোঁতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পায়রা নদী সংলগ্ন চর ও নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চরে বসবাসরত মানুষরা উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের কৃষক শিবলী শরীফ বলেন, শুধু পানি আর পানি। চারিদিকে পানিতে থই থই করছে। আমনের খেত চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে।
গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী গ্রামের জামাল সরদার বলেন, খেকুয়ানী জলকপাট দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিস্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে কৃষকের আমনের জমি চাষাবাদ সমস্যা হবে।
পায়রা ফেরিঘাট পরিচালক মোঃ রাহাত দফাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে তিন ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। দ্রুত ফেরির গ্যাংওয়ে সংস্কার করা জরুরী।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, বর্ষার পানি কৃষকের যেমন উপকারে আসবে তেমনি দ্রুত পানি সরে না গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চর ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে পানি প্রবেশ করেনি। তিনি আরো বলেন, ঝুকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ আগেই সংস্কার করা হয়েছে।