
(1) ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামে টাকার ঝনঝনানি। চোখের পলকে কোটিপতি হয়ে যান অনেক ক্রিকেটার। এত এত টাকা এক তুড়িতে পেয়ে যাওয়ার ধাক্কা কজনই বা সামলাতে পারেন, মানে সেই মূল্যের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে পারেন মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে! এই বোধটুকু আছে তিলক ভার্মার। ইলেক্ট্রিশিয়ানের ছেলে তার ক্রিকেট প্রতিভা দিয়ে এখন কোটিপতি, এই তকমার যথার্থতা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ তার সামনে।
(2) বাবা নাম্বুরি নাগারাজু ইলেক্ট্রিশিয়ান। সন্তানের ক্রিকেটীয় সম্ভাবনা বিকশিত করতে ব্যর্থ তিনি। কিন্তু থেমে থাকেনি তিলকের প্রতিভার বিকাশ, এগিয়ে আসেন একজন কোচ। তারপরের গল্প শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। হায়দরাবাদের চন্দ্রায়ানগুত্তার অলিগলিতে তিলক ব্যাট হাতে বিস্ময় জাগানো শুরু করেন মাত্র ৯ বছর বয়সে। আকর্ষণীয় ব্যাটিং অবস্থান, কাটস ও পুলস শটসে নজর কাড়ানো সেই ছেলেটির বয়স এখন ১৯ বছর। আইপিএলের মেগা নিলামের দ্বিতীয় দিন তাকে ১ কোটি ৭০ লাখ রুপিতে কিনে নেয় রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
(3) একজন ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে কোচ সালাম বায়াশকে সব কৃতিত্ব দেওয়া বাড়াবাড়ি নয়। প্রয়োজনীয় গ্রুমিং, খাবার এবং যখন দরকার পড়েছে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকা নিজের ঘরে থাকতে দিয়েছেন তিলককে। বাবা নাম্বুরির সামর্থ্য ছিল না তাকে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে পাঠানোর কিংবা ব্যাট-প্যাড কিনে দেওয়ার। কিন্তু সালাম সব খরচ বহন করে তাকে সামনে এগিয়ে নেন।
(4) মুম্বাই কিনে নেওয়ার পর তিলক বলেছেন, ‘আমার সম্পর্কে না লেখলেও কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু অবশ্যই কোচ সালাম স্যারের নাম উল্লেখ করবেন। তিনি আমাকে ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম কিনে দিতেন এবং আমার খরচের বেশিরভাগ (লেগালা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে) তিনি দিতেন। তাই সব কিছু হয়েছে তার কারণে এবং আমার পরিবারের সমর্থনে এখানে আমি।’
(5) ভাড়া বাসায় চার সদস্যের পরিবারকে নিয়ে থাকেন তিলক। করোনা মহামারির সময় আর্থিকভাবে চরম সংকটে পড়ে তার পরিবার। লকডাউনের মধ্যে নতুন কোনো কন্ট্রাক্ট পাচ্ছিলেন না তার ইলেক্ট্রিশিয়ান বাবা। কিন্তু ক্রিকেট থেমে থাকেনি, যার পেছনে রয়েছে তার কোচের অক্লান্ত সমর্থন।
(6) ২০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যে নিলামে যোগ দেওয়া তিলক বললেন, ‘অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ ছিল এবং মহামারির সময় আমাদের টানাটানির সংসার ছিল। কিন্তু আমার কোচ আমাকে ক্রিকেট চালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন। আশা করি সবকিছু এখন ঠিক হয়ে যাবে।’
(7) আসন্ন লিগ ম্যাচের জন্য হায়দরাবাদ রঞ্জি ট্রফির দলের হয়ে খেলতে কটাকে আছেন তিলক। সেখান থেকে নিলামের খোঁজ রেখেছেন তরুণ বাঁহাতি। তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংসের আগ্রহ ছাপিয়ে তাকে পেয়ে যায় মুম্বাই।
(8) নিলামে এত দাম ওঠায় আশ্চর্য হয়েছেন তিলক, ‘আইপিএলে খেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম আমি। কিন্তু কখনো এত দাম উঠবে সেই প্রত্যাশা ছিল না। আমি যে দলকে সবসময় ভালোবাসতাম সেই দলের জন্য খেলতে যাচ্ছি, এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। সেরাদের পাশে থেকে খেলতে, শিখতে ও আমার দক্ষতা বাড়াতে এটি আমাকে সুবর্ণ সুযোগ দিবে।’
(9) কোচের ভাষ্যে, এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তিলককে এবং মুম্বাই হচ্ছে তার জন্য সেরা মঞ্চ। সালাম বলেছেন, ‘আমি এর চেয়ে বেশি খুশি হইনি। এটা তার ধৈর্য ও অধ্যাবসায়ের ফসল। আমাদের কঠোর পরিশ্রমের দীর্ঘ পথচলা ছিল। মুম্বাই অনেক বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অনেক খেলোয়াড়কে তৈরি করেছে এবং আমি আশা করি তিলকও অনেক পথ পাড়ি দিবে।’
(10) তিলক তিন বছর আগে অন্ধ্র প্রদেশের বিপক্ষে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষিক্ত হয়। ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন। রানার্সআপ হওয়ার ওই আসরে দুটি ম্যাচ খেলে ৩৮ ও ৪৮ রান করেন তিনি। সম্প্রতি ঘরোয়া ওয়ানডে প্রতিযোগিতা বিজয় হাজারে ট্রফিতেও রানবন্যা ছিল তার ব্যাটে, পাঁচ ম্যাচে ১৮০ রান ও উইকেট নেন চারটি। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সাত ম্যাচ খেলে ১৪৭.২৬ স্ট্রাইক রেটে ২১৫ রানও বলছে কেন তাকে এত দাম দিয়ে কিনল মুম্বাই। এবার দামের যথার্থ প্রমাণ করার পালা। -রাইজিংবিডি.কম