চালের দাম নির্ধারণ দিল সরকার

প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০ | আপডেট: ১২:০৯:পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মিনিকেট চাল (মিলগেট মূল্য) প্রতি ৫০ কেজি বস্তার মূল্য ২ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং মাঝারি চাল প্রতি ৫০ কেজি বস্তার মূল্য ২ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ মূল্য বাস্তবায়ন না হলে ১০ দিনের মধ্যে সরকার সরু চাল আম’দানির অনুমতি দেবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুম’দার।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) খাদ্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে প্রথমে ১৫ দিন আগের দামে চাল বিক্রির নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। এরপর আবার চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে চালের দাম বেঁধে দেয়া হয়।

এর আগে বৈঠক চলাকালে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম ১৫ দিন আগে যা ছিল সে দামেই পুরো অক্টোবরে বিক্রি করতে হবে। কোনোভাবেই এ মাসে আর চালের দাম বাড়ানো যাবে। গত এক সপ্তাহে যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তা কমিয়ে আনতে হবে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মিনিকেট চাল আগের দামে বিক্রি করতে হবে। পাইকারি বাজারে ৫১ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৭৫ টাকা। আর ২৮ নম্বর বা মাঝারি মানের চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি চাল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা। এর ব্যত্যয় হলে ১০ দিনের মধ্যে সরু চাল আম’দানি করা হবে।

তিনি বলেন, মোটা চাল পর্যাপ্ত মজুত আছে। মানুষ এখন মোটা চাল খায় না। যারা খায় তাদের জন্য ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দিচ্ছি। আড়ৎদার ও খুচরা বাজারের দাম কৃষি বিপণন ও ভোক্তা অধিকার নির্ধারণ করবে। প্রতিদিন তারা সকালে এটা নির্ধারণ করে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি সপ্তাহে ধান-চালের দাম বাড়ছে। এটা আপনারা করেন না। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে আম’রা আম’দানি করতে বাধ্য হবো চালের দাম আর বাড়াবেন না। গত এক সপ্তাহে যে দাম বাড়িয়েছেন সেটা কমিয়ে আনেন। করো’নার সময়ে লাভ কম করেন। আজ থেকে পাক্ষিক ক্ষমতাসম্পন্ন ধান মজুত আছে। যেটা ১৫০ টাকা বাড়িয়েছেন সেটা কমিয়ে আনেন। আপনারা নতুন ধান কেনেন না। তবে চালের দাম কমিয়ে আনতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, অ’বৈধ মজুতকারীদের বি’রুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আ’দালত শুরু হয়েছে। এখন মিল মালিকরা বলেন পু’লিশ পাঠাইয়েন না। আম’রা এর ব্যবস্থা করছি। ধান চাল মজুত আছে। এই ধান চাল বের করতে হবে। মিলাররা যদি সেসব মজুতদার থেকে ধান কেনা বন্ধ করেন তাহলে অটো সে ধান বের হয়ে আসবে।

সভায় রশিদ এগ্রো ফুডের মালিক আবদুর রশিদ বলেন, আসলে মিলাররা মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ মিলারদের একটু হলেও সম্মান আছে। চলতি মাসে চাল ২৮০০ টাকা বস্তা পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ২৬০০ টাকার বেশি বিক্রি করিনি। মিলে অ’ভিযান চালানোর ব্যাপারে কোনো আ’পত্তি নেই। কিন্তু মিলারদের অহেতুক হয়’রানি বন্ধ করতে হবে। মোটা চাল ৪৫ টাকা ও চিকন চাল ৫০ টাকা হবে এটা কোনো দিন সম্ভব না। আজ কৃষকের ন্যায্য মূল্যের কথা বলা হচ্ছে। সেটা তারা পাচ্ছে। আম’রা বাজার থেকে কিনছি কিনা, মজুত করছি কিনা সেটা আপনারা দেখেন। যদি কোনো সমস্যা পান তাহলে যে শা’স্তি দেবেন তা মেনে নেব।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের এরফান এগ্রো ফুডের মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মোটা চাল শেষ হওয়ায় চিকন চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। এক আড়তে ১৫ হাজার বস্তা চাল। এটা রাখার ক্ষমতা নেই। ঋণ নিয়ে অ’বৈধ মজুত করছে। আম’রা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আম’রা ব্যবসা করবো কিন্তু সম্মান থাকবে না তা হতে পারে না।

নওগাঁর মিলমালিক নিরোধ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ২০১৮-১৯ সালে আম’দানি চালুর পর দেশে ৪৫ মেট্রিক টন চাল ঢুকেছে। ২৬ টাকা কেজি ধানের দাম দিলে ৪০ টাকার নিচে দিতে পারবো না। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। তাহলে চাল ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে সমস্যা কোথায়?

সভায় বাবু বাজার ও বাদামতলি আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিকির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, মিনিকেট চাল প্রতিবস্তা ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকা সেটা বিক্রি করি ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজিতে। এতে আমাদের এক টাকা থেকে ৫০ পয়সা লাভ হয়। আটাশ চাল ২৩০০ থেকে ২৩৫০ টাকায় বাস্তায় বিক্রি করি। আম’রা চাল উৎপাদন করি না। আমাদের চার আনা, আট আনা লাভ হলেই যথেষ্ট। সিন্ডিকেট বলতে চাল মজুত না, এক দর বুঝায়।

খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমা’র সাহা, কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্ম’দ ইউসুফ, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, অ’তিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল আজিজ মোল্লা প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email