
# ‘আর কত দিন এভাবে জেলে থাকবে আমার বাবা? বাবার মুক্তির জন্য কত চেষ্টা করছি, কিন্তু হচ্ছে না। আমার বাবা তো অপরাধী নয়। তাহলে কেন তাকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে?’ কারাবন্দি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের মুক্তির দাবি জানিয়ে ছেলে মনোরম পলক গতকাল শুক্রবার আক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন এই প্রতিবেদককে।
# গত ১০ মার্চ থেকে টানা ৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলে পাওয়া যায় ফটো সাংবাদিক কাজলকে। বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর হয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই দিন যশোরের আদালত অনুপ্রবেশের মামলায় জামিন দিলেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠান। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করা হয়েছিল। কাজলকে ডিজিটাল আইনের দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
# মনোরম পলক বলেন, ‘জামিনের আবেদন করেই চলেছি; কিন্তু জামিন হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে আপিল করব। তাতে যদি বাবার জামিন হয়, বেঁচে যাবে একটি পরিবার। কারাগারে বাবার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হচ্ছে।’
# বাবার মুক্তির জন্য মূলত একাই লড়াই করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্সের শিক্ষার্থী মনোরম পলক। শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কখনো জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, কখনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ব্যানার হাতে মা ও ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন পলক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার বাবার মুক্তির দাবিতে ভার্চুয়াল আলোচনারও আয়োজন করেন তিনি। পাশাপাশি নিয়মিত পুলিশের কাছে ধরনা দেন, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়ান। বাবার দেখা পাবেন না জেনেও কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
# কাজলের মুক্তির দাবিতে তাঁর স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মণিহার ইসলাম হতাশ হয়ে পড়েছে। তবে পলক প্রায় প্রতিদিন ফেসবুকে কিছু না কিছু লিখে বাবার মুক্তির দাবি জারি রেখেছেন। গত ২৩ আগস্ট কাজলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হলেও বাবা-ছেলের দেখা হয়নি। সেই দুঃখে কেঁদেছিলেন দুজনই।
# মেয়ে মণিহারকে স্কুল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গত ১০ মার্চ বাসা থেকে বের হন কাজল। সেই থেকে নিখোঁজ হন তিনি। কাজলকে নিখোঁজ জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। মাগুরার সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর গত ৯ মার্চ কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এ ছাড়া হাজারীবাগে ১০ মার্চ আর ১১ মার্চ কামরাঙ্গীর চর থানায় কাজলকে আসামি করে মামলা করা হয়।
# কাজলের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কাজলকে যেন জামিন দেওয়া না হয় সব সময় সে চেষ্টাই চলছে। কাজল বর্তমানে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।’