
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কৃষি জমির পানি নিষ্কাশনের খাল (ক্যানাল) বন্ধ করে নিজ পুকুরে মাছ চাষের জন্য বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে শামীম নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। খালটি বন্ধ করে দেয়ায় রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের ধলিয়াটি বিল, মসাইয়া বিল, পূবের গনি বিল, কাজলা বিল, চারিতালুক বিলসহ বেশকয়েক বিলে পানির অভাবে চার শ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ইরি ধান স্কিম প্রজেক্টের আওতায় ভোলাবো ইউনিয়নের ধলিয়াটি বিল, মসাইয়া বিল, পূবে গনি বিল, কাজলা বিল, চারিতালুক বিলসহ আশপাশের এলাকায় আবাদি জমিতে চাষাবাদের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী থেকে চারিতালুক ও কাজলা বিল পর্যন্ত জমি থেকে পানি নিষ্কাশন ও পানি আনার জন্য জন্য দুই কিলোমিটারের একটি খাল নির্মাণ করা হয়। কৃষকরা প্রত্যেক মৌসুমে জমিতে ইরি ধান চাষের জন্য এ খাল দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে পানি নিষ্কাশন ও পানি এনে জমিতে ব্যবহার করেন। ৪০০ বিঘা জমিতে উৎপাদিত ধান তারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।
ইরি ধান স্কিম প্রজেক্টের এ খালটি চারিতালুক এলাকার রোমান মিয়া ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীমের বাড়ির পাশেই। শামীম ভোলাবো ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি। বর্তমানে তিনি ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী ও সভাপতি প্রার্থী।
খালটির পাশেই শামীম তার পুকুরে মাছ চাষ করেন। কিছুদিন আগে তিনি খাল ও নদীর সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করে সেখানে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। কৃষকেরা শামীমের কাছে গিয়ে বেশ কয়েকবার খালটি খুলে দেওয়ার কথা বললেও শামীম কারো কথা তোয়াক্কা করেননি। তার ভয়ে সাধারণ কৃষকেরা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে শামীম তার লোকজন দিয়ে তাদের হুমকি-ধামকি দেন বলে অভিযোগ।
কৃষকরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে পড়ে। ধান চাষের জন্য জমিতে মই দিতে হয়। এর জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। এ বছর পর্যাপ্ত পানির সরবারহ করতে না পারলে ভোলাবো ইউনিয়নের চার শ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ ব্যাহত হবে। এতে করে কৃষকরা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বেন। যুবলীগ নেতা শামীমকে নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বেশ কয়েকবার খালের বিষয়টি সুরাহা করতে বললেও শামীম কাউকে তোয়াক্কা করেননি।
কৃষক আমিনুল ইসলাম বকুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমি প্রতি বছরই প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ইরি ধানের চাষ করে করি। চাষাবাদ করেই আমার সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। এখন পানির অভাবে চাষাবাদ হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে খুব বিপদে পড়ে যাব।
আরেক কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, চাষাবাদ আমাদের রক্তে মিশে আছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ক্যানালটি বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ করায় নদী থেকে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই জমিতে হালচাষ করতে পারছি না। জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পাই তার নিজেরা চাল করে সারা বছরের জন্য খাওয়ার জন্য রেখে দেই আর বাকিটা বাজারে বিক্রি করে দেই। এবার যদি ধান চাষ না করতে পারি তাহলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাবে।
এ ব্যাপাওে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা শামীম বলেন, এ খালের সঙ্গে আমার পুকুর রয়েছে। পুকুরে আমি মাছের চাষ করি। এ খাল দিয়ে আমার পুকুরের মাছ অন্য দিকে চলে তাই খালটিকে বন্ধ করে দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, ঘটনাস্থলে লোকজন পাঠিয়ে বাঁধটি সরিয়ে ক্যানালটি পুনরায় চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়া বলেন, বাঁধটি সরিয়ে খালটি খুলে দিয়ে ইরি ধান চাষের জন্য কৃষকদের জমিতে পানি সরবারহের ব্যবস্থা করা হবে। -ঢাকাটাইমস