ঝালকাঠিতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলো ১৩ বছরের বালক
মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু
সিনিয়র সাংবাদিক

দুর্গা প্রতিমা তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো মাত্র ১৩ বছর বয়সী বালক বিধান দাস। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার করে ২০১৮ সালে ঝালকাঠি পৌর আদর্শ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে তার আর পড়া লেখা হয়ে ওঠেনি। ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত কুনিহাড়ি গ্রামের শ্রমজীবী বিমল কুমার দাসের পুত্র বিধান দাস। কুনিহাড়ি গ্রামের হাওলাদার বাড়ির পুজা মন্ডপে তার তৈরি করা প্রতিমায় এবার প্রথমবারের মত দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে।
জানাযায়, দুর্গাপূঁজার সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নামকরা মৃৎ শিল্পীরা ঝালকাঠিতে প্রতিমা তৈরি করতে আসলে শিশুকাল থেকেই বিধান দাস নজর রাখত শিল্পীর তুলির ছোয়ায়। মৃৎ শিল্পের একাগ্রতায় বেশ কয়েক বছর ধরেই হিন্দু ধর্ম্বালম্বীদের বিভিন্ন পূজার প্রতিমা তৈরি করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তার নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করেছেন কালী, স্বরস্বতী সহ নানা প্রতিমা। প্রতিমা তৈরিতে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিণ নেই এই কিশোর বালকের। দূও থেকে অন্য কারিগরদের কাজ দেখেই শিখেছেন মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির নিপুন কারুকার্য।
গত বছর বাড়ির আঙিনায় প্রথম দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেন বিধান। তারপরই সবার নজরে আসে বিধানের এ শিল্প গুণ। এবছর ুদে এই শিল্পী দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে। বিধানের তৈরি করা প্রতিমায় হাওলাদার বাাড়িতে যথা নিয়মে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় দুর্গা পূজার কর্মযজ্ঞ চলছে বেশ ধুমধামেই।
প্রতিমা কারিগর বিধান দাসের বাবা বিমল দাস জানান, দু’বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কালীবাড়ি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ দেখে বিধান প্রতিমা তৈরির কারিগর হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। বয়সে ছোট আর পারিবারিক অর্থ সংকট থাকার কারনে ছেলের এ ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। পরে সে বাড়িতেই মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে গত বছর সে নিজের ঘরের বারান্দার মধ্যেই তৈরি করে দুর্গা প্রতিমা। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোবারেক হোসেন মলিক তাকে দুই হাজার টাকা পুরুস্কার দেন এবং পরবর্তী বছর বড় পরিসরে তার হাতের তৈরি প্রতিমায় পূজা উদযাপন করা হবে বলে জানান। এতে উৎসাহ বাড়ে বিধানের। সে দুর্গাপূজার দুমাস আগ থেকেই বাড়ির আঙিনায় শুরু করে প্রতিমা তৈরির কাজ। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিমা তৈরি করা হলে প্রথমবারের মত সরকারী নির্ধারিত মন্ডপ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় হাওলাদার বাড়ি পূজা মন্ডপ। এসে মহা খুশি ুদে কারিগর বিধান দাস ও স্বজনরা। এটাই তার প্রতিমা শিল্পী হয়ে ওঠার প্রথম স্বীকৃতি।
মন্ডপ এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুমার বলেন, কোন ডাইস বা ফর্মা ছাড়াই ছেলেটি নিজ হাতে কার্তিক, গনেশ, লী, স্বরস্বতী, মহিষাসুর ও দূর্গা মায়ের মুখ মন্ডল তৈরি করেছে যা অভাবনীয়। কিশোর বয়সে তার প্রতিভা অনেক নিখুঁত ও শিল্পীগুণ সম্বলিত। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভবিষ্যতে সে অনেক বড় কারিগর হতে পারবে।
কুনিহাড়ি গ্রামের হাওলাদার বাড়ীর পূজা মন্ডপ পরিচালনার সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু চন্দ্র এদবর বলেন, প্রতিমা কারিগর বিধান দাসের আত্মবিশ্বাস ও সাহস দেখে আমরা হতবাক। তার প্রতিভা সত্যিই প্রশংসনীয়। পাল বংশের সন্তান না হয়েও কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিণ ছাড়াই বিধান দাস যে প্রতিমা তৈরির কারিগর হয়ে উঠছে তা স্যতিই বিরল ঘটনা। তাকে সঠিক ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হলে সে নিজেকে আরো দ প্রতিমা শিল্পি হিসেবে তৈরি করতে পারবে।
হাওলাদার বাড়ির দূর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সঞ্জিব হাওলাদার জানান, এ মন্ডপের পুজায় অংশগ্রহণকারীরা বিগত বছর গুলোতে আশেপাশের বিভিন্ন মন্ডপে পুজা দিতো। প্রতিমা তৈরিতে মোটা অংকের টাকা খরচ হত বিধায় এখানে পূজা আয়োজন করা সম্ভব হত না। এবছর বিমল দাসের পুত্র বিধান দাস এত অল্পবয়সেই দ কারিগরের মত দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে পুজার আয়োজন করায় আমরা সনাতন ধর্ম্বালম্বীরা আনন্দিত। প্রত্যাশা করি সে ভবিষ্যতে অনেক বড় মৃৎ শিল্পি হয়ে গড়ে উঠবে।
এবিষয়ে আলাপকালে ুদে প্রতিমা কারিগর বিধান দাস জানায়, আমি নিজ হাতে প্রতিমা বানাবো এটা আমার শখ ছিলো। শখকে আমি টার্গেটে পরিণত করি। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও সকলের আশির্বাদে আজ আমি সফল হয়েছি। আমার তৈরি করা প্রতিমা দিয়ে হাওলাদার বাড়িতে এ বছর প্রথম পূজা উদযাপন করা হচ্ছে। এটা অনেক বেশি আনন্দের।
এদিকে মাত্র ১৩ বছর বয়সে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে পুজা উদযাপন করার খবরে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে হাওলাদার বাড়ির পুজা মন্ডপে। সপ্তমীর দিন থেকেই নানা বয়সের দর্শনাথীরা পুজা মন্ডপ ঘুরে দেখতে আসছেন। আর এত অল্প বয়সের কারিগরের হাতের নিখুত ছোঁয়ায় তৈরি প্রতিমা দেখতে দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপ। কেউ কেউ প্রতিমা কারিগর বিধান দাসের সাথে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে ুদে শিল্পী বিধানের প্রতিভা জানান দিচ্ছেন।