২৩তম নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে, বগুড়ায় মহিলা ফোরামের মানববন্ধন সমাবেশ
জি এম নিউজ জি এম নিউজ
বাংলার প্রতিচ্ছবি
রাকিবুল ইসলাম, বগুড়াঃ
২৩তম নারী নির্যাতন প্রতিরোধ (ইয়াসমিন হত্যা) দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর উদ্যোগে আজ ৩০ আগস্ট ২০১৮ বেলা ১২ টায় সাতমাথায় মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর আহ্বায়ক নারী নেত্রী দিলরুবা নূরীর সভাপতিত্বে এবং মহিলা ফোরাম জেলা সদস্য ডলি দাসের পরিচালনা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ জেলা সদস্য সচিব সাইফুজ্জামান টুটুল। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সভাপতি রাধা রানী বর্মন, মহিলা ফোরাম জেলা নেতা মুক্তা আক্তার মীম, নিয়তি সরকার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ কর্তৃক ধর্ষিত ও নিহত হয়েছিল দিনাজপুরের ইয়াসমিন। এর বিরুদ্ধে দিনাজপুরসহ সারাদেশে গড়ে উঠা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের স্মরণে প্রতিবছর ২৪ আগস্ট পালিত হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ৭ জন সংগ্রামী মানুষের জীবনের বিনিময়ে এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামসহ বাম-প্রগতিশীল নারী সংগঠনসমূহ, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের আন্দোলনের মুখে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার বিচার কার্যকর হয়। এরপর কেটে গেছে ২২ বছর। নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা তো কমেইনি বরং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পিটিয়ে হত্যা, যৌতুকের কারণে হত্যা, এসিডে ঝলসে দেয়া, ইন্টারনেটে ছবি ছড়িয়ে ব্ল্যাকমেইল করা ইত্যাদি নির্যাতনের ধরণ বেড়েছে, দীর্ঘ হয়েছে নির্যাতিতদের মিছিল।
ছয় বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধা, শিক্ষিতঅশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, সমতল বা পাহাড়ের আদিবাসী, সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই শারিরীক-মানসিকভাবে চলছে এই নির্যাতন। বক্তাগণ আরও বলেন, সারাদেশে নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। জানুয়ারি থেকে জুন ২০১৮ এই ৬ মাসে ৪২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জনকে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ২০৮ জন, নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় ১৪৪ জনকে, নির্যাতনের শিকার ৮৫৬ জন শিশু এবং নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪৮ জন শিশুকে। এসবই পত্রিকায় আসা পরিসংখ্যান। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। নারী-শিশু নির্যাতন এতো ভয়াবহ মাত্রায় আসার একটি অন্যতম কারণ বিচার না হওয়া। নির্যাতনের যত ঘটনা দেশে ঘটে তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা হয় না। মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রিতা, আর্থিক অসামর্থতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকে মামলা চালাতে পারেন না। তারপরও নারী-শিশু নির্যাতনের ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মামলা এখনও বিচারাধীন। মামলা যাও বা হয় তার মধ্যে ৯৭% মামলায় কোন সাজা নাই। ক্ষমতা ও টাকা দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সমাবেশ থেকে সাংবাদিক সুবর্ণা নদী সহ সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সহ বিচার তরান্বিত করে নারী-শিশু নির্যাতক-ধর্ষক-হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। বক্তাগণ সারাদেশের নারী-পুরুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই-এ শামিল হবার আহ্বান জানান।