তৃণমূল নেতা-কর্মী ও জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবারও শুরু হচ্ছে সাংগঠনিক সফর। চলবে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হবে। সরকারের উন্নয়ন প্রচার, দল ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের করণীয় কী তাও তুলে ধরা হবে। গ্রামে-হাটে-ঘাটে ভোট প্রার্থনা করা হবে নৌকা মার্কায়। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা এমনটাই জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের একজন করে প্রেসিডিয়াম সদস্যের নেতৃত্বে এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদককে মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে অনেক আগেই। সেই কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কয়েক দফা জেলা সফর করেছেন। তারা আবারও জেলা সফরে নামছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী বিশেষ বার্তা দেবেন তৃণমূলকে। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের ভিতরে ঐক্য বেশি প্রয়োজন বলে মনে করে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সে কারণে চার মাস বাকি থাকতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে। কারণ প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তীব্র হচ্ছে এই কোন্দল। কোথাও কোথাও সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে কোন্দলের মাত্রা। গত জুন ও জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। এবার কেন্দ্রীয় নেতারাও মাঠে নামছেন কোমর বেঁধে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হচ্ছে এই সফর। সফরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা, বর্ধিত সভা ও প্রতিনিধি সভার মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনার পর তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থার বর্তমান অবস্থান কী, কোন্দল কতটুকু নিরসন হলো, যদি ঐক্য না থাকে তাহলে সেগুলো নিরসনে করণীয় কী সেগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হবে। গ্রাম-হাট-মাঠ ঘুরে তুলে ধরা হবে সরকারের উন্নয়নের চিত্র, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের দুঃশাসন-সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের চিত্র।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদ শেষ হয়েছে। শোকের মাস আগস্ট শেষের দিকে। এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে তৃণমূলের সব পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে থাকব জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত। বর্তমান মেয়াদে কী কাজ করেছি, আগামীতে কী করতে চাই, সে বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরব।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের কাছে আমরা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা, মানুষ হত্যা, সিরিজ বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদ তুলে ধরব। মানুষ আওয়ামী লীগের সুশাসন চায়, নাকি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের দুঃশাসন চায়।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আমাদের এখন টার্গেট তিনটি। এর মধ্যে জনগণের সংযোগ স্থাপন, দলের ভিতর আরও বেশি ঐক্য এবং সরকারের উন্নয়ন প্রচার। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠন। সে লক্ষ্যে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব।’
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় জনপ্রতিনিধিকে গণভবনে ডেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেগুলোর ফলোআপ করতে জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, কর্মিসভা ও প্রতিনিধি সভা করব। একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তৃণমূলকে জানাব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চলছে। এ অপপ্রচারের জবাব দিতে আমাদের কী করণীয় তা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করব।’ সূত্র : বাংলােদেশ প্রতিদিন