জেমি দুঃখ পেলেন হালের শিল্পীদের ব্যাবহারে

এ আল মামুন এ আল মামুন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩২:পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৮

অনিয়ম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময়েই সরব মোহাম্মদ হোসেন জেমি। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই পরিচালক ৭ আগস্ট তার ফেসবুকে এ সময়ের নায়িকাদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যেখানে উঠে এসেছে সেই তারকাদের অসংযত আচরণের চিত্র। জি এম নিউজ এর পাঠকদের জন্য জেমির সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমি ক্যামেরার পেছনের মানুষ। আমার ওপর আলোর ঝলকানি নেই। তারকা খ্যাতি নেই। দর্শকের ভিড়ে আমাদের ধাক্কা দিয়ে ভক্তরা ছুটে যায় তাদের প্রিয় তারকাদের সান্নিধ্য পেতে, অটোগ্রাফ নিতে। যখন সিনেমার গল্প লিখি, পরিচালনা করি তখন নায়কের চরিত্রের মধ্যে গেঁথে দিই নিজের আচরণ, স্বভাব আর নীতিবোধ। দর্শক জানেও না তাদের প্রিয় নায়কের চারিত্রিক বৈশিষ্টাবলির উৎস কোথায়!

এদেশের বর্তমান নির্মাতারা বেশিরভাগ সময়েই শুধু অবহেলিত নয়, তথাকথিত শিল্পীদের কাছে ভোগের উচ্ছিষ্টও। এই নিয়ে আমার দুঃখবোধ নেই। আমাদের দেশের মানুষগুলো এমনই। তারা যাকে পর্দায় দেখে তাকেই কাছে টানে। তাদের মুখের সংলাপ দর্শকদের কাছে অমিয় বাণী। কিন্তু সেই সংলাপ লেখে একজন লেখক।

এখনকার বাপ্পি সাহা একজন পরিচালককে ধাক্কা দিয়ে আর একজনের সাথে কথা বলতে এগিয়ে যায়, সেদিনের পরীমনি এবং ১৮টি ছবির ফ্লপ নায়িকা মহরত অনুষ্ঠানে বয়োজ্যেষ্ঠ পরিচালকদের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে সম্মান দেখায় না, ফোন করলে ফোন ধরে না, ফোন ধরায় কাজের লোক দিয়ে।

অপু, সাহারা, পপিরাও একসময় এটা করত। আজ তারা সেই পরিচালদেরই কৃপার অপেক্ষায় আছে একটা ছবি পাওয়ার জন্য। মৌসুমীও একবার তার ড্রাইভারকে দিয়ে আমার ফোন ধরিয়েছিল। সেদিন শুটিংয়ে আমি তাকে বলেছিলাম- আমার নাম্বার দেখার পরও যদি সানী ভাই বাদে অন্য কোনো চাকরবাকর ফোন ধরে, তাহলে ওই দিনই আমি আপনার সাথে শুটিং বন্ধ করে দেব। তাতে আমার যত ক্ষতি হয় হোক।

মাহিয়া মাহি মেকাপ রুমে চেয়ারে পা তুলে পরিচালকদের সাথে কথা বলে। অথচ সে কে, কোথা থেকে এসেছে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পারিবারিক পরিচয় গোটা চলচ্চিত্র পরিবারের সবাই জানে! বড় দুঃখজনক!

তাহলে কি শাবানা আপা, ববিতা আপা, আলমগীর ভাই, ফারুক ভাই, প্রবীর দা, ওয়াসিম ভাইদের রেখে যাওয়া শিষ্টাচার অচল হয়ে গেছে? প্রযোজক, পরিচালকদের প্রতি এই ধৃষ্টতামূলক আচরণই কি এখন ইন্ডাস্ট্রিকে গিলতে হবে? বেলা শেষে এসব ভাবনা আমাকে আচ্ছন্ন করে। ওদের মতো অর্থ আমরা পাই না, খ্যাতি পাই না, শুধু একটু সম্মানও কি আমাদের প্রাপ্য না?

তাইতো অনেক ক্ষোভ আর ব্যথা নিয়ে বলিউডের দিকে হাত বাড়িয়েছি। ওখানে অন্তত সম্মানটা পাচ্ছি। ওখানে কোনো মাহি আমার সামনে পা তুলে বসে মেকাপ করবে না। কোনো পরীমনি পাশের খালি চেয়ারটায় তার ব্যাগ রেখে ঘ্যাট দিয়ে বসে থাকবে না।

বলিউডে একজন মিস ইন্ডিয়া, একজন মিস টিন ইউনিভার্স-২০১৭, হিট ছবি পেয়ার কি পঞ্চনামার নায়িকা দাঁড়িয়ে সম্মান দিয়ে শুরুতে স্যার বলে সম্বোধন করে যে মর্যাদা আমাকে দেখাল, তাতে মনে হলো-ক্যামেরার সামনে না থাকি তো কী হয়েছে, ক্যামেরার সামনের তারকারা আমাদের সম্মান দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে-একজন পরিচালকই ক্যাপ্টেন। তিনিই পারেন জাহাজকে সঠিক বন্দরে পৌঁছাতে। জাহাজের বাকি সব তার যাত্রী। ক্যাপ্টেনকে সম্মান করতে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাই তাদের শিখিয়েছে।

অন্ধকারের মাঝে আলোর উদাহরণও আছে। মিশা সওদাগর, জায়েদ খান, রিয়াজ, সাদেক বাচ্চু, শিমুল খান, সায়মন, রোজিনা আপা, অঞ্জনা আপা, দিলারা আপা, জ্যাকি আলমগীরসহ অনেক শিল্পী আছেন, যাদের ব্যবহার ও শিষ্টাচার তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রমাণ করে।

আরেক দল আছে, যারা তাদের বয়সের বেড়াজালে আটকে পড়ে, এখন আর নায়িকা হওয়ার ডাক না পাওয়ায়, তাদের সকল ক্ষোভ, জ্বালার বহির্প্রকাশ ঘটান আমাদের মতো মধ্যবয়স্ক পরিচালকদের সাথে চিরতার পানির মতো ব্যবহার করে। যেমন- সিমলা, পূর্ণিমা, শাহনূররা। এরা আপন জ্বালায় জ্বলছে, তবে মাহি, পরীদের মতো অশোভন না।

নিঝুম রুবিনা, শারমিন শিলা, মিষ্টি জান্নাতসহ আরও কিছু জান্নাতী নায়িকা আছে, যাদের পেছনে কিছু বটবৃক্ষ ‘ভাইয়া’ আছে। যাদের ছায়াতলে এরা বেশিরভাগ সময় শীতল থাকে বলে পরিচালকদের সম্মান বা মর্যাদা দেবার প্রয়োজন এরা বোধ করে না। তবে মাঝেমধ্যে ছায়া সরে গেলে এরা মধ্যবয়স্ক থেকে তরুণ পরিচালকদের কারণে-অকারণে ঘন ঘন হাগ দেয়, সুইট হার্ট বলে ডাকে। এরা কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি।

মোদ্দাকথা, চলচ্চিত্রের এই দারুণ খরায়, এখনও কিছু প্রযোজক আত্মঘাতী বিনিয়োগে ছবি নির্মাণ করেন। তাদের পায়ের নিচে বিশ্বাসের গালিচা বিছিয়ে নিয়ে আসেন একমাত্র পরিচালকরাই। যে পরিচালকরা তাদের মেধার সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ ঘটিয়ে ছবি নির্মাণ করেন।

বেলা শেষে শিল্পীসহ সবাই সবার পাওনাটা বুঝে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। শুধু বাকি থাকে মেধা বিক্রেতা পরিচালকের টাকাটা। ছবি ফ্লপ গেলে সেই টাকাটাও সব সময় পাওয়া যায় না। টাকা না হয় বুড়িগঙ্গার পানিতে বিসর্জন গেল, তবু তাদের অতৃপ্ত আত্মা যেন উল্লেখিত নায়ক-নায়িকাদের ব্যবহার ও সম্মান দেখানোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও তৃপ্ত হয় সেদিকে দৃষ্টি দেবার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকল।

চলচ্চিত্রের জয় হোক।

Print Friendly, PDF & Email