দিয়ার ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন ছিল

জি এম নিউজ জি এম নিউজ

বাংলার প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০১৮ | আপডেট: ৮:৩৮:পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০১৮

জন্ম শুধু জননীর দেহ জানে।সন্তানের মধ্যে স্বপ্ন পিয়াসী মা শত যন্ত্রণা পুষে রাখেন অন্তরে। সন্তান লালনের যন্ত্রণা মায়ের কাছে সব সময় মধুর। সন্তান গর্ভে আসা থেকে শুরু করে তার পৃথিবীর আলো দেখা পর্যন্ত একজন মায়ের যেন স্বপ্নের শেষ নেই। সন্তানের আস্তে আস্তে বড় হওয়া, স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হওয়া। কতই না স্বপ্ন। সন্তান বড় হয়ে আলোকিত মানুষ হবে।হঠাৎ আচমকা ঝড়ে বিনাশ হয় অনেক মায়ের স্বপ্ন।তার মধ্যে একজন হতভাগা মা হচ্ছে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীমের মা রোকসানা বেগম।ঘাতক বাস বিনাশ করেছে তার স্বপ্ন।

গত ২৯ জুলাই (রোববার) দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন। এ ঘটনা কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।অবরোধ এখনো অব্যাহত আছে।

সঙ্গে আলাপচারিতায় শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মহাখালীতে দিয়ার বাসায় গেলে তার বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আলাপকালে উঠে আসে দিয়ার বাবা-মায়ের স্বপ্ন বিনাশের বিভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, মীম পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে কলেজের উদ্দেশে রওনা হতো। ওর কথাবার্তা, চলাফেরা ও পোশাকের মধ্যে ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। কেউ ওকে দেখে বলবে না মীম সামান্য একজন চালকের মেয়ে।

তিনি বলেন, জীবনে বড় হওয়ার প্রচণ্ড স্বপ্ন ছিল ওর ভেতরে।শত অভাবের মধ্যে কখনো মুখের হাসিটা মলিন হতো না।সারা দিন না খেয়ে থাকলেও কেউ বুঝতে পারত না। শান্ত স্বভাবের মেয়ে আমার।বড় আদরের।ওর মধ্যে লুকিয়ে আছে ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন।কিন্তু পূরণ হলো না।

মায়ের সঙ্গে মীমের শেষ কথা চিল খোদা হাফেজ উল্লেখ করে সন্তানহারা এই মা বলেন, মীমকে যেদিন বাসচাপা দেয়া হয় ওই দিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় খোদা হাফেজ বলে বিদায় নিল। আর ঘরে ফিরল না- বলতেই দুই চোখ ভিজে আসে রোকসানার।

কান্নাজড়িত ভারি কণ্ঠে রোকসানা বলেন, মীমের মৃত্যুর পর থেকে এখন আর ঘুমাতে পারেন না তিনি। চেতন বা অবচেতন অবস্থায় মীমের মা ডাক শুনতে পান তিনি।কখনো মেয়ের জন্য কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেও স্বপ্নেও মেয়ের মা ডাকে চোখ মেলেন তিনি।

মীমের জন্য তার মহাখালীর বাসায় চলছে শোকের মাতন। কোরআন খতম দেয়া হচ্ছে।

মায়ের পাশে বসে ছিল মীমের বোন রোকাইয়া খানম রিয়া ও ছোট ভাই রিয়াদুল ইসলাম।মীমের কথা জিজ্ঞাসা করতেই দুই চোখের পানি ছেড়ে দেয় তারা।

রিয়া জানায়, ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা করা ঘুরে বেড়ানো, পুকুরে সাঁতার কাটা, এক বালিশে ঘুমানো, লুডু খেলা, পুতুল খেলা সবই এখন শুধুই স্মৃতি। এক মুহূর্তের জন্য দিয়ার কথা ভুলতে পারছেন না রিয়া। সঙ্গে ছোট ভাই রিয়াদুল। অশ্রুসিক্ত নয়নে নির্ঘুম রাত কাটছে ওদের।

দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি সন্তান হারিয়েছি কিন্তু এখন সান্ত্বনা পাই এই ভেবে যে, আমার এখন দিয়ার মতো অনেক সন্তান আছে। যারা দিয়ার জন্য রাস্তায় আন্দোলন করেছে। ওরা আমরা সন্তান। বাবা হিসেবে আমি ওদের ও দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০ লাখ টাকার সাহায্য দিয়েছেন। এছাড়া আমাদের পাশে থাকার জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।আমার পরিবার ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে কৃতজ্ঞ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন যেহেতু তোমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। তাই তোমরা ঘরে ফিরে যাও। আমি চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক।

নিহত দিয়ার বাড়ি বরিশালের মঠবাড়িয়ায়। ঘটনার দিন বাসচাপায় দিয়া নিহতের ঘটনায় বাসচালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন জাহাঙ্গীর হোসেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তভার নিয়েছে উত্তর ডিবি।

Print Friendly, PDF & Email