খালেদা জিয়ার মুক্তি তরান্বিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পেলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনেই লক্ষ্য স্থির করেছে বিএনপির তৃণমূল। জেলা পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার বিষয়টি বিচারিক বাস্তবতার চেয়ে রাজনৈতিক অর্থে গুরুত্বপূর্ণ বেশি। ফলে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচকেও প্রাধান্য দিতে হবে।
শুক্রবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের দ্বিতীয় সেশনে আলোচনার বেশিরভাগ অংশজুড়েই ছিলো নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সংগঠন। এ পর্বে বরিশাল ও খুলনা বিভাগীয় অঞ্চলের ২৩টি সাংগঠনিক জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা বক্তব্য রাখেন। প্রায় প্রত্যেকেই সংগঠনের পাশাপাশি আন্দোলনের প্রসঙ্গ তোলেন। প্রত্যেকের কণ্ঠেই ছিল— ঢাকা মহানগর কমিটির ব্যর্থতা। বিগত ১০ বছরে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে মহানগর বিএনপি, যা গত বছরের শেষ দিকে উত্তর-দক্ষিণে বিভক্ত হয়।
গত বছরের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগ করে এম এ কাইয়ুম ও আহসান উল্লাহ হাসানের নেতৃত্বে ৬৬ সদস্যের উত্তর এবং হাবিব উন নবী খান সোহেল ও কাজী আবুল বাশারের নেতৃত্বে দক্ষিণের ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। নেতারা বৈঠকে জানিয়েছেন, আগামী দিনের আন্দোলনে বিজয়ী হওয়ার পূর্বশর্ত ঢাকা মহানগরকে নেতৃত্বে দিতে হবে এবং সক্রিয় হতে হবে।
বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়েও আলোচনা হয়। তৃণমূলের আলোচনার কোনও জবাব দেননি মঞ্চে থাকা সিনিয়র নেতারা। তারা প্রত্যেকেই নোট নিয়েছেন নাম ধরে-ধরে। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানালেন, ‘নোট নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করে আগামী দিনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে।’
যদিও আরেক সদস্য জানালেন, ‘এমন বৈঠক বিএনপি এখন নিয়মিত করে। পরিস্থিতির কারণে অনেক বৈঠক হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূলের সঙ্গে এই বৈঠক।’
শুক্রবার সকালে বৈঠকের প্রথম পর্বে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিএনপির ১৯টি সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে বৈঠক করে দলের হাইকমান্ড। ওই বৈঠকের আলোচনায় ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দেওয়ার কথা ওঠে।
দুই পর্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। হাসিমুখে তিনি বললেন, ‘এই বৈঠক সাংগঠনিক। বলা যাবে না।’
তবে কথা বলেন যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন ও নির্বাচন দু’টিরই প্রস্তুতি নিতে বলেছি। তবে প্রথম প্রায়োরিটি হবে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি করা। কারণ, সরকার তার মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবে নিয়েছে। তাই আইনিভাবে তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। এরপরও তাকে মুক্ত করেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।’
সাবেরুল হক সাবু আরও বলেন, ‘কর্মসূচির মধ্যে লংমার্চ, মানবপ্রাচীর ও সমাবেশ এসব থাকতে পারে। এর বাইরে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা সিনিয়র নেতারা বসে ঠিক করবেন। এছাড়া, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কথাও বলেছি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আব্দুর জব্বার সোনা বলেন, ‘আন্দোলনে নামার আগে ঢাকা মহানগরকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ অতীতে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আন্দোলন সফল হলে রাজধানীতে সফল হয় না। এবার যেন সেই রকম না হয়, তাই আগে মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডকে শক্তিশালী করতে হবে।’
খন্দকার আব্দুর জব্বার আরও বলেন, ‘বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্চাসেবক দলের জেলা কমিটি দেওয়ার আগে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে দিতেও অনেকে আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, জেলা নেতাদের সমন্বয় না করে এসব কমিটি করা হলে আন্দোলনের সময় এসব সংগঠনের নেতাদের পাওয়া যায় না।’
মাগুরা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্র ঘোষিত যে কোনও আন্দোলন সংগ্রাম করতে প্রস্তুত আছে জেলা বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের সূচনা করতে হবে রাজধানীতে থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের। না হলে জেলায় আন্দোলন করে লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। যা আমরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেখেছি। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের কোনও দিক নির্দেশনা দেননি। তারা শুধু আমাদের মতামত নিয়েছেন।’
মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ বলেন, ‘আমরা আন্দোলন, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আগামীতে বিএনপি কী করবে, তা নির্ধারণ করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।’
দ্বিতীয় সেশনে বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী এবং পিরোজপুরসহ ২৩টি সাংগঠনিক জেলার নেতারা বিকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেক জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক বৈঠকে বক্তব্য রেখেছেন। বিকালের সেশনে প্রায় ৫০ জন জেলা নেতা বক্তব্য রেখেছেন। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন