টাকায় ভোট বিক্রি শুরু, কাউন্সিলর আলতাফের কর্মী নগদ টাকাসহ আটক

প্রকাশিত: ৮:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৮ | আপডেট: ৫:২২:অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০১৮

বরিশাল সিটি নির্বাচনে শুরু হয়ে গেছে টাকায় ভোট বিক্রি। ২১নং ওয়ার্ডেও সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আলতাফ মাহামুদ সিকদারের কর্মী জালালকে নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ আটক করেছে সাধারণ ভোটাররা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

সূত্রমতে, ভোটের আগের দু’রাত ভোট কেনা-বেচা চললেও এবার আগেভাগেই নেমে পরেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নগরীর ৩৫ কলোনীর (বস্তি) ৩৩ হাজার ভেটের উপর অনেক কিছু নির্ভর করলেও এর বেশিভাগই ভোট  বিক্রি হয়ে যায় বলে সূত্র জানিয়েছে।

ওয়ার্ডওয়ারী হিসেবে, নগরীর ৫নং ওয়ার্ডে ১৩টি, ১০নং ওয়ার্ডে ৮টি, ৬নং ওয়ার্ডে ৫টি, ৩নং ওয়ার্ডে ৫টি এবং ২নং ওয়ার্ডে ৪টি কলোনী (বস্তি) রয়েছে। বস্তির ভোট কেনা-বেচার ইতিহাসও এখানে নতুন নয়। প্রায় প্রতিটি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে এ কেনা-বেচার ঘটনা ঘটান বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী নেতারা।

নগরীতে আলোচনা আছে যে বিগত সিটি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী মরহুম শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়ের পেছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল বস্তির ভোট গোছানোর ব্যর্থতা। হিরন ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সেবার নির্বাচনে হিরনের আশপাশে থাকা কয়েকজন বস্তির ভোট গোছানোর দায়িত্ব নিলেও শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে তাদেরই ২-১ জনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে নানা গোলমালের খবরও বেরোয় তখন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচারণার পুরোটা সময় যে টাকা খরচ করেন তার প্রায় সমান খরচ হয় ভোটের আগের দু’রাতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেকটি ভোট কিনতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করেন প্রার্থীরা। আর এ টাকার প্রায় পুরোটাই ব্যয় হয় নগরীর এ ৩৫টি বস্তিতে। কেননা যেখানে সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ফলাফল নির্ধারণ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার ভোটে সেখানে এ ৩৩ হাজার ভোটের গুরুত্ব কতখানি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’ভোট কেনাবেচা বন্ধে কার্যকরী কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একজন দক্ষ ও যোগ্য মানুষের নির্বাচিত হওয়া অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, এ ৩৩ হাজার ভোটের ওপর নির্ভর করে জয়-পরাজয়ের অনেক কিছু। আর এর বেশিরভাগই বিক্রি হয় টাকায়। ফলে যে কোনো নির্বাচনের আগের রাতে অন্ধকার মানুষের গোপন আনাগোনায় নীরবে-নিভৃতে জমজমাট হয়ে উঠে এসব ভোটারদের এলাকা।’

অবশ্য বস্তির সব ভোট টাকায় কেনাবেচা হওয়া নিয়ে ভিন্নমতও আছে। বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এসএম ইকবাল বলেন, ‘টাকা নিয়ে যে ওই প্রার্থীকেই ভোট দেয় সব ক্ষেত্রে তা হয় না। অনেক সময় আবার সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা ভোট দেয় পছন্দের প্রার্থীকে। গেল সিটি নির্বাচনে এর নজির আমরা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু কলোনির বহু বাসিন্দা সেবার টাকা নিয়েও সাবেক মেয়র হিরনকে ভোট দেননি। আবার টাকা নিয়ে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেননি এমন উদাহরণও রয়েছে। আসলে তাদের অভাবটা বিক্রি হয় ভোটের দামে। এটা ঠেকাতে প্রশাসন তথা রিটার্নিং দফতরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ভোটের মাঠে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন কখনোই সম্ভব হবে না।’

Print Friendly, PDF & Email