নারী ও শিশুবান্ধব বরিশাল নগরীর প্রত্যাশা নারীনেত্রীদের সোহানুর রহমান সোহানুর রহমান হেড অব নিউজ প্রকাশিত: ১১:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৮ | আপডেট: ১২:৪৮:অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৮ SHARES বরিশাল নগরীর প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী হলেও বরিশাল নগরীতে চলাফেরা বা অপরাপর সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রায় দেড় যুগ আগে বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিগত ৩টি সিটি নির্বাচনে নির্বাচিত নগর পরিষদের কোন সদিচ্ছা ছিল না বরিশালকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার। এমনকি বার্ষিক বাজেটেও এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। ফলে এখনো নগরীতে নারীরা চলাফেরায়, কর্মস্থলে এবং সমান অধিকার প্রাপ্তিতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।তাই বরিশাল নগরী নারীবান্ধব নগরী বলে মনে করেন না স্থানীয় নারী নেত্রীরা। বরিশালকে শিশুবান্ধব নগরী ঘোষণা করা হলেও যদিও এখন পর্যন্ত নারীদের উন্নয়ন ও সেবায় নেয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগ। তাদের মতে, ভোটের পরিসংখ্যানে বরিশাল নগরীতে জয়-পরাজয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর নারীদের ভোট। তাই আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে এ অবস্থায় আগামীতে যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন, তার কাছে নারীবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য বিলোপ, মাদার্স কর্নার প্রতিষ্ঠাসহ নারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দাবি এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি করেছেন নারী নেত্রীরা। প্রতিশ্রুতিও মিলেছে মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে। তবে মেয়র নির্বাচিত হলে এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান নারী অধিকার কর্মীরা।পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিশু বান্ধব নগরী বাস্তবায়নে আরো সমন্বিত ও বাস্তবধর্মী কর্মসূচি চান তারা। বিসিসির নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ মাত্র ৭০৬ জন পুরুষ ভোটার বেশি। যাদের সিংহভাগই ভোটের সময়ে কর্মস্থলে থাকায় ভোটে অংশ নিতে পারেন না। ভোটার সংখ্যায় নারীরা অর্ধেক হলেও নগরীতে তারা নানাভাবে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন পেশার নারী নেত্রীরা। শিক্ষিকা পাপিয়া জেসমিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভোটের সময় মা-বোন বলে ভোট নিয়ে পরে নারীদের অবহেলা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের এলাকা বড়, ভোটও পান বেশি। অথচ তাদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয় না। ঘরে পানি না থাকলে নারীরাই বেশি কষ্ট পান। সবদিক বিবেচনা করলে এ নগরীতে নারীরাই সর্বাধিক উপেক্ষিত। উন্নয়ন সংগঠক ও নারী নেত্রী রাহিমা সুলতানা কাজল বলেন, বরিশাল নগরীতে নারী ভোটার অর্ধেক হলেও তাদেরই অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। শ্রমজীবী নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার। নগর কর্তৃপক্ষের উচিত শ্রমজীবী নারীদের অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা। কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের কোথায় রেখে কর্মস্থলে যাবেন তার কোন সুব্যবস্থা নেই। এমনকি একমাত্র বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় ব্যতীত কর্মস্থলে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোরও ব্যবস্থা নেই সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানেই। রাহিমা সুলতানা কাজল মনে করেন, নারীদের জন্য নগর কর্তৃপক্ষের এ অধিকারগুলো নিশ্চিত করা দায়িত্ব হলেও কেউ সে দায়িত্ব পালন করেননি। বরিশাল মহিলা পরিষদের সভাপতি রাবেয়া খাতুন বলেন, নগরীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা যথাযথভাবে পাচ্ছেন না। নগরীতে স্বাচ্ছন্দ্যে নারীদের চলাচলেও নানা প্রতিবন্ধকতাও আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী ছাত্রীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অথচ নারীদের ভোট নিয়ে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরা এসব বিষয়ে মাথা ঘামান না। নারী ভোটার শাকিলা ইসলাম মনে করেন, বরিশাল যেমনি শিশুবান্ধব নগরী হবে, তেমনি নারীবান্ধব নগরীও হতে হবে। প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশালের ঐতিহ্য যিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন তাকেই আমরা নগরপিতার আসনে দেখতে চাই। শাকিলা বলেন, অপরিকল্পিত তিলোত্তমা নগরী হিসেবে নয় বরিশালকে দেখতে চাই আধুনিক, পরিচ্ছন ও সবুজ নগরী। আগামী প্রজন্মের জন্য এক বাসযোগ্য নগরী। যেখানে মানুষ তাদের নাগরিক সুবিধা পাবে তাদের দোড়গোড়ায়। নারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে। আমাদের চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার যিনি দিতে পারবেন, ভোটের মাধ্যমে ভবিষ্যত নগরপিতা হিসেবে আমরা তাঁকেই বেছে নেব’। এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের নির্বাচন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, বিএনপি সর্বক্ষেত্রে নারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি দলের ইশতেহারে থাকবে এবং বিজয়ী হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা হবে। বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, নির্বাচিত হলে নগর কাউন্সিলের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। আমি এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রথম নারী প্রার্থী। বিগত ১৫ বছরে কোনো মেয়রই নারীবান্ধব কর্মসূচি হাতে নেয়নি। নারীবান্ধব কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি সমাজকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে পাড়ায় পাড়ায় পাঠশালা তৈরি, রচনা প্রতিযোগিতা, গণিত উৎসবসহ সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর জোর দেওয়া হবে। নারীবান্ধব নগরীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটা মনে করি আধুনিক বরিশাল সিটি করপোরেশনে নারীবান্ধব নগরীর যে সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা ছিলো। বরিশালে সেই জায়গাটা প্রায় শূন্য। সাধারণ একটা পাবলিক টয়লেট যেটা নারীরা ব্যবহার করবে সে ব্যবস্থা এই নগরীতে নেই। কর্মজীবী হোস্টেল, ডে-কেয়ার সেন্টার এগুলোর কথা তো বাদই দিলাম। বরিশালে সম্প্রতি সময়ে যারা মেয়র হয়ে কাজ করেছেন নারীবান্ধব নগরী তৈরির চিন্তা আমরা একেবারেই দেখিনি। আমরা নির্বাচিত হলে শিশু ও নারীবান্ধন নগরীর জন্য যে কর্মকাণ্ড করা প্রয়োজন তা করা হবে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ শিশুদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে নগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একটি করে শিশু পার্ক ও শিশুবান্ধব নগরীর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গণমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্র নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগই নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ বিজয়ী হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী করে গড়ে তোলা হবে। কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা, বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন ও নারী সহায়ক নগরী গড়বেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেন, ইসলাম সবচেয়ে বেশি নারীদের অধিকার দিয়েছে। নারীদের সমান অধিকার নয়, অগ্রাধিকারে বিশ্বাসী। কাজেই ইসলাম তথা কুরআন বর্ণিত নারী অধিকার বাস্তবায়ন করলে নারীরা সবচেয়ে নিরাপদ থাকতে পারবে। নারীদের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি মেযর হলে তাই করা হবে। আরও পড়ুন বরিশালে প্লান্ট এগ্রো কেয়ার ফ্যাক্টরির শুভ উদ্ভোধন করা হয়েছে বাবুগঞ্জে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ