সুষ্ঠু ভোটের কে দেবে ভরসা? (ভিডিও) সোহানুর রহমান সোহানুর রহমান হেড অব নিউজ প্রকাশিত: ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০১৮ | আপডেট: ২:১১:পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০১৮ SHARES বরিশাল সিটি নির্বাচনে খুলনা ও গাজীপুর ইলেকশন মডেলের জুজুর ভয় ভর করেছে বিএনপি-জাপাসহ সরকার বিরোধী মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে। আশংকা কাজ করছে সাধারণ ভোটার ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও। বরিশালে আশংকার কারন হিসেবে বারবার মেয়র প্রার্থীরা ঘুরেফিরে বলছেন আ’লীগের মেয়র প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা এবং তার (সাদিক) বাবা মন্ত্রী পদমর্যাদাসহ এখানকার প্রভাবশালী ব্যাক্তি। এরসাথে যুক্ত হয়েছে বির্তকিত ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার। যদিও প্রত্যুত্তরে সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, আমি বরিশালের ছেলে। নির্বাচন করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। প্রধানমন্ত্রী আমার ফুপু, বাবা মন্ত্রী- এতে আমার কি অপরাধ? আওয়ামীলীগকে উন্নয়নে বিশ্বাসী দল দাবি করে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে যা যা করা দরকার তাই করবে বলে উল্লেখ করেছেন। সাদিকতো নয়ই খোদ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসেও ভরসা পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। কারন হিসেবে বলছেন সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দেওয়ার পরও খুলনা এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটে অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই শুধু আশ্বাস নয়, নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণার সঠিক বাস্তবায়ন প্রত্যাশী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সূত্রমতে, গত সোমবার বিকেলে বরিশালে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বরিশাল সিটিতে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ওই সভায় পুলিশ কিংবা অন্য কোন বাহিনীর সদস্য অতিউৎসাহী হয়ে ভোটের পবিত্রতা নষ্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে ৯১ সালের বিশেষ বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী দেন তিনি। বরিশালসহ ৩ সিটি ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হলে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা বলে বক্তব্যে বলেন মাহবুব তালুকদার। এ নির্বাচনের মডেলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু গতকাল ৮ম দিনের গণসংযোগকালে নির্বাচন কমিশনারের এ আশ্বাসে ভরসা ভরসা পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী। প্রার্থীদের পাশাপাশি নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক এবং বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ভোটাররাও সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। জানতে চাইলে সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক বলেন, খুলনা মডেলেই গাজীপুওে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। ভোট কারচুপি ঠেকাতে জাগ্রত জনতাই রক্ষাকবচ বলে তিনি মনে করছেন। এদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের প্রতি তার নিজ ১৯ নং ওয়ার্ড’র ২টি কেন্দ্র জগদীশ স্বারস্বত গার্লস স্কুল ও সরকারী বরিশাল কলেজে ইভিএম চালুর দাবী জানিয়েছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪ টায় সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পত্র বরিশাল নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার বরাবরে জমা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার কালিবাড়ী রোডের ঘরোয়া বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে একটি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে দুপুরের পর নগরীর ৬,৭,৮, ২৩,২৪,২৫ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় এবং নগরীর নিুবিত্ত ও বস্তি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়েছেন সাদিক। অন্যদিকে, সকালে নগরীর কাশীপুর, নগরীর সদর রোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। গণসংযোগকালে সরওয়ারের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রিয় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির জেলা ও মহানগর নেতারা। এসময় অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের মুক্তি এবং নগরীর পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান সরোয়ার। সকাল ১১ টায় নগরীর বাংলাবাজার মোড় এলাকায় গণসংযোগকালে সরোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন খুলনা এবং গাজীপুরেও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু তারপরও ওই দুই সিটির ভোটে কারচুপি হয়েছে। বরিশালেও যে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর ভোটে কারচুপি হবে না তার নিশ্চয়তা চান সরোয়ার। শুধু আশ্বাস নয়, নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ভোটের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান তিনি। এ সময় জন্য ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান তারা। বিকেলে বিএনপির প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী র্মীজা আব্বাস নগরীর জামে কসাই মসজিদে আছর নামাজ আদায় করে গনসংযোগে নামেন। নগরীর দক্ষিন চকবাজার, সিটি কর্পোরেশনের মোড়, ফজলুল হক এ্যাভিনিউ সড়ক, কাকলীমোড়, সার্কিট হাউজ মোড়, জিলা স্কুল মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গনসংযোগ ও লিফলেট বিতরন করেন। এসময় মির্যা আব্বাস বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন আমাদের ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে প্রচারনায় বৈষম্যমূলক আচরন করছে। প্রতিপক্ষ ও সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের নির্বাচন আচরন বিধিভংগ করে প্রচারনা করছে তাতে কোন বাধা নেই আমাদের ধানের শীষের প্রচারনায় বাধা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন খুলনা ও গাজীপুরের যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তারা এখানেও তাই করার চেষ্টা করবে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর সাথে অসহযোগিতামূলক আচরন বন্ধ করার আহবান জানান আব্বাস। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সকালে নগরীর কাঠপট্টি এলাকায় গণসংযোগ করে আধুনিক নগরী গড়তে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান । তিনি সকাল ১০ টায় বরিশালের প্রধান ডাকঘর থেকে জেলা প্রশাসক দফতর, বরিশাল আইনজীবী সমিতি, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ সড়ক, বগুড়া রোডের সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও নগরীর বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তাপস বলেন, জনগনের মধ্যে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় কাটেনি। ৩০ জুলাই জনগন ভোট দেবে নাকি প্রশাসনের লোকেরা ভোট দেবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে ভোটারদের মাঝে। তিনিও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ভোটের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান। অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত ও উলামায় কেরাম সমর্থিত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী প্রিন্সিপ্যাল হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডেও নতুন বাজার টেম্পু স্ট্যান্ড ও ২৯নং ওয়ার্ডের কাশিপুর চৌমাথায় নির্বাচনী পথসভা করেন। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)। পথসভায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেন, ‘ইমামরা হলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা। তাই আমি মনে করি ইমামরা ঐক্যবদ্ধ হলে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হবে। সম্মিলিতভাবে ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ এছাড়া সিপিবির কাস্তে প্রতীকের একে আজাদ, বাসদের মই মার্কার মনীষা চক্রবর্তী এবং জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী বশির আহম্মেদ ঝুনুও (সতন্ত্র প্রার্থী) হরিণ প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচারনায় দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। আরও পড়ুন বাবুগঞ্জে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও মাঠ ছাড়বেনা স্বপন ! নলছিটি উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম চৌধুরী’র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়