
ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়েও কাঠুয়া গণধর্ষণকাণ্ডে আট বছরের শিশুর পরিবারের পাশ থেকে সরে যাননি আইনজীবী দীপিকা সিং রাজাওয়াত। নিজের সহকর্মীদের কাছ থেকেই হুমকি পেয়েছেন তিনি।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টকে দীপিকা সিং জানান, প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে তাকে। যে কোনো সময় তার সঙ্গে কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে। খবর এনডিটিভির।
দীপিকা সিং রাজাওয়াত বলেন, ‘আমি জানি না আর কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারব। আমিও ধষর্ণের শিকার হতে পারি, আমার শালীনতার অপমান হতে পারে, হয়তো আমাকে খুন করে ফেলতে পারে অথবা পঙ্গুও করে দিতে পারে। আমায় রোববারই প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, আমায় ওরা ক্ষমা করবে না। আমি সুপ্রিমকোর্টকে সোমবার জানাব যে, আমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে’ (সোমবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দীপিকার সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি)।
গত সপ্তাহেই কাঠুয়ার ধর্ষণকাণ্ডের আইনজীবী সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়ে ছিলেন, জম্মু বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিএস সালাথিয়া তাকে লাগাতার হুমকি দিয়ে চলেছেন।
দীপিকা সিং বলেন, ‘আমি জম্মু বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নই। কিন্তু বুধবার আমি যখন কোর্টে যাই আমাকে সালথিয়া এই মামলা থেকে সরে যেতে বলেন। আমি তাকে কোনো পাল্টা জবাব দিইনি, কারণ আমি একমাত্র জবাব দিতে বাধ্য আমার মক্কেলকে।’
দীপিকা সিং আরও বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি না, কিন্তু আমি সুরক্ষিত নই।
আসিফার মহিলা আইনজীবীকে হুমকি
ধর্ষণ করে খুন। অপরাধীদের আড়াল করতে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলের আয়োজন। তাতেও অপরাধ লোকানো যায়নি। আসিফা বানুর গণধর্ষণ ও হত্যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক তারপরই আসিফার হয়ে আদালতে লড়তে যাওয়া আইনজীবীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ছোট্ট আসিফার হয়ে আদালতে লড়ছেন মহিলা আইনজীবী দীপিকা সিং রাজাওয়াত। ভয়েস অফ রাইটস নামে একচি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। দুঃস্থ মহিলাদের হয়ে কাজ করে এই সংগঠন। আসিফার হয়ে তিনিই আদালতে লড়াই করতে নেমেছেন। অভিযোগ, দর্ষকদের বাঁচাতে এরপরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে জম্মুর বার অ্যাসোসিয়েশন।
দীপিকা নিজে এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যা নন। কিন্তু বহু আইনজীবীই তাকে জানাচ্ছেন, এই মামলা না লড়াই ভাল। তাতে অবশ্য দমে যাননি দীপিকা। তবে ঘটনাও এখানে শেষ হয়নি। দীপিকা জানাচ্ছেন, জম্মু বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিএস স্লাথিয়া তাকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন। আসিফা মামলা থেকে দীপিকা যাতে দূরে থাকেন, তা বারবার করে তাকে বলা হচ্ছে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল ব্যাঁকানোর উপায়ও যে জানা আছে এমনটাও বলা হয়েছে তাকে।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে নিজেকে আর নিরাপদ মনে করছেন না তিনি। তবে লড়াইয়ের ময়দানও ছাড়ছেন না। অকুতোভয় দীপিকা বলছেন, আমি ভয় পাচ্ছি না। তবে নিরাপদও নই। কিন্তু হাল ছাড়ছি না। ওরা চাপ সৃষ্টি করে মামলা তুলে দিতে চাইছে। কিন্তু আমি ন্যায়ের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব।
ইতিমধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের হাই কোর্টে ও সুপ্রিম কোর্টে তিনি এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আদালত তার অভিযোগ গ্রহণ করেছে। তার নিরাপত্তার দিকটিও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বাখরওয়াল সম্প্রদায়ের প্রতি স্থানীয় মানুষের বিদ্বেষকে কাজে লাগিয়েই আড়াল করার চেষ্টা চলছে অভিযুক্তদের। আইনজীবীকে হুমকির ঘটনায় তা ফের প্রমাণিত হল।