রৌমারীতে মৃত্যু সঙ্গে যেন পাঞ্জা লড়ছে উপজেলা আ,লীগে সাবেক সভাপতি
সাকিব আল হাসান সাকিব আল হাসান
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

রৌমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি :
১৯৭১ সালের ২ মার্চ পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়েই স্বাধীনতা অর্জনের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিলো বাঙালি জাতির। একটি পতাকা, একটি নতুন পরিচিতি। একটি ভূখণ্ডের নিজস্বতা। একাত্তরের দোসরা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল-সবুজে হলুদ মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো সেই স্বাতন্ত্রবোধ আর স্বাধিকারের আহ্বান।
২৬ মার্চ ভোর বেলা রৌমারীর ভি,এইচ,এফ পাবলিক কল অফিসে রৌমারীর নির্বাচিত এম,পি,এ নূরুল ইসলাম পাপু মিয়ার নামে একটি টেলিগ্রাম আসে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে যাতে উল্লেখ থাকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন। তাৎক্ষণিক টেলিগ্রাম হাতে জনাব পাপু মিয়া চলে যান সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এবং সি,জি জামান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের বাসায়, তিনি তখনই আহ্বান করেন সংগ্রাম কমিটির জরুরী সভা। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঐদিন রৌমারীর সর্বত্র পাকিস্তানি পতাকার বদলে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হবে।
২ মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক পতাকার মাপ, রঙ সহ ডিজাইন প্রকাশ করে পত্রিকায়। সে মাপ অনুযায়ী রৌমারীর অনেকেই নিজ উদ্যগে উত্তোলন করতে থাকেন দোকান, অফিস, বাড়ি এবং প্রতিষ্ঠানে কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের জন্য প্রয়োজন একটি বড় আকারের পতাকা। সেটি করার দায়িত্ব নিজে থেকেই গ্রহণ করেন আজিজুল হক সাহেবের সহধর্মিণী রিজিয়া বেগম। নিজের ছিল সেলাই মেশিন,কাপড় কাটলেন একা একা। অল্প সময়ের মধ্যেই নিজে তৈরী করে দিলেন একটি পতাকা, তুলে দিলেন সংগ্রাম কমিটির হাতে। তাকে কাপড় কিনে সহায়তা করেছিলেন সংগ্রাম পরিষদের ইউনিয়ন সম্পাদক ফজলুল হক খান,তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীও। বেলা ১১ টার সময়ই হাই স্কুলের ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে উত্তোলন করা হলো পতাকা। এ সময় ছাত্রছাত্রীদের কন্ঠে গীত হয় ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’… জাতীয় সংগীত।
ঐতিহাসিক এ ঘটনার পরের দিন রিজিয়া বেগম তৈরি করেন অন্য আরেকটি পতাকা যেটি নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের আসামে, গৌহাটিতে আসামের রাজধানী। রাজ্যসভার সামনে উত্তোলন করা হয়েছিল সে পতাকাটি। স্বাধীন বাংলার মুক্তাঞ্চল বলে পরিচিত রৌমারী উপজেলা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
রৌমারী সি জি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক রক্তশূন্যতা ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। বেশিরভাগ সময়েই তার স্মৃতিভ্রম হয় এবং এলোমেলো কথা বলেন। চিকিৎসায় একটু বিলম্ব হলে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করে। আজিজুল হকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসে চিকিৎসক ও ওষুধ বাবদ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আজিজুল হকের বড় ছেলে আইনজীবী মো. মাসুম ইকবাল জানান, তার বাবা এখন আগের স্মৃতি ঠিকমতো স্মরণ করতে পারেন না এবং কারো কথা বুঝতে পারেন না। আজিজুল হক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাপ্তাহিক অগ্রদূত নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটির কপি বর্তমানে জাতীয় যাদুঘর, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা সদরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরাতন ও বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রৌমারী সি জি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন।
তিনি কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫ সালে অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রৌমারী উপজেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে রয়েছে এই গুণী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ভূমিকা। মো. মাসুম ইকবাল বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। এখন আমার বাবার শরীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ দেখতেও আসেননি। হয়তো তার মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। অনেক সম্মানের সঙ্গে তাকে সমাহিত করা হবে। কিন্তু এখন কিছুই করা হচ্ছে না। সরকার এগিয়ে আসলে আমার বাবার উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হতো এবং তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।