অসহায় এক বাবার গল্প

জি এম নিউজ জি এম নিউজ

বাংলার প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০১৮ | আপডেট: ৬:৫৭:পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০১৮
বাবা-মা এর মত আপন পৃথিবীতে কেউই হয় না । যারা সারাজীবন কষ্ট করে নিজের সন্তানকে মানুষ করে । নিজে খেয়ে না খেয়ে নিজের সন্তানদের জন্য ভাল খাবার যোগাড় করে । সন্তানকে মানুষ করার জন্য যিনি সারাটি জীবন সংগ্রাম করেছেন । সেই মানুষটা যদি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কষ্ট করে জীবন যাপন করে, তাহলে সেই সন্তানের বেঁচে থাকাই বৃথা ।
আজ যার কথা বলবো, তিনি ছিলেন একজন নিম্ন আয়ের বেসরকারি চাকুরীজীবী । নাম তাঁর “মোঃ রহিম মিয়া”(ছদ্মনাম) । সারাটি জীবন তিনি নিম্ন আয়ের চাকুরী করেছেন । কিন্তু তার চাকুরী নিম্ন আয়ের হলেও তার মনটা অনেক বিত্তশালী ।
অনেক বছর আগের কথা । প্রায় ২৫ বছর আগের কথা । । ছেলে অনেক বড় হবে সেই স্বপ্ন দেখে রহিম সাহেব তাঁর ছেলেকে ভাল স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন । তিনি এবং তাঁর স্ত্রী খেয়ে না খেয়ে ছেলের পড়াশুনার জন্য টাকা জমাতেন । ছেলে একদিন অনেক বড় অফিসার হবে এই স্বপ্নই তাঁরা সব সময় দেখতেন ।
একদিন তিনি তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন ছেলের স্কুলের বেতন, পরীক্ষার ফী দিয়ে ওনার পকেট প্রায় খালি । আছে মাত্র কিছু টাকা । যা দিয়ে তার দুপুরে পেট পুরে খেতে হবে । কিন্তু স্কুলে তাঁর ছেলের বড়লোক বন্ধুদের চকলেট দেখে তাঁরও খুব মন চাচ্ছে ছেলেটাকে কিছু কিনে দিতে । তাই তাঁর ছোট্ট ছেলেকে বলে, “আব্বু চল, দোকানে যাই, কিছু কিনে দেই তোমাকে ।” ছেলেটি বাবার কথায় খুশি হয়ে বাবার সাথে দোকানে গেল । তিনি চেয়েছিলেন অল্পের মধ্যে কিছু কিনে দিতে । ঠিক তখনই তাঁর ছোট্ট ছেলেটি বাবার কাছে আবদার করে বসল । একমাত্র ছেলের আবদার মেটাতে বাবা তাঁর পকেটের প্রায় সব টাকাই খরচ করে ফেলল । তবুও তিনি খুশি, কারণ নিজের সন্তানের মুখে হাসি দেখেছেন । সেদিনের মত অনেকদিন তিনি একটি সিঙ্গারা খেয়ে সারা দুপুর কাটিয়ে দিয়েছেন ।
আজ এত বছর পরে সেই ছেলেটি অনেক বড় চাকুরী করে । অথচ নিজের বাবাকে দেখে না । যে বাবা-মা নিজেরা না খেয়ে সন্তানকে বড় করে তুলেছে সে বাবা-মা নাকি তার সমাজে মেশার মত না । তার স্ট্যাটাসের সাথে নাকি তাঁরা যায় না । বাবা মাকে কোন অনুষ্ঠানে নিয়ে যায় না । তার বাসায় কেউ আসলে বাবা-মা কে রুমে আটকে রাখত । অবশেষে সে এবং তার বউ বুদ্ধি করে রহিম সাহেব ও তার স্ত্রীকে গ্রামে রেখে আসে । রহিম সাহেবের ছেলে আর তার বউ এখন আলাদা থাকে । প্রথম প্রথম সে তার বাবা-মার সাথে যোগাযোগ করত । মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসত । ২ বছর পর ওদের ঘর আলো করে এসেছে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান । রহিম সাহেবের খুব ইচ্ছা করে নাতিকে দেখতে । কিন্তু তাঁর সেই সামর্থ্য নেই ।
রহিম সাহেবের ছেলে এখন আর তাঁদের আর্থিক ভাবে তো সহায়তা করেই না । তাঁদের দেখতেও যায় না কখনো । এমনকি ঈদেও দেখা করতে যায় না । রহিম সাহেব ও তাঁর স্ত্রী গ্রামে থাকেন । তাঁর স্ত্রী এখন অসুস্থ । সেও অনেকটা অসুস্থ । তবুও দুবেলা দু’মুঠো ভাত যোগাতে দিন মুজুরের কাজ করেন ।
অসহায় সে বাবা প্রত্যেকটা সময় আশা করে থাকে কখন তাঁর ছেলে তাঁকে দেখতে আসবে । আর সে তাঁর নাতিকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে ।

Print Friendly, PDF & Email