নগরীতে কাগজের ফুল বিক্রি করে সংসার চালায় চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী শান্তা মনি

আরিফ হোসেন আরিফ হোসেন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩২:পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০১৮

দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল ৩টা। চৈত্রের খরতাপ রোদের ঝাজ এখনো কমেনি। সোমবার সারাদিন শহরের অলিগলি ঘুরে ক্লান্ত শরিরের একটু বিশ্রামের জন্য ছায়াঘেড়া প্রিয় ক্যাম্পাস বরিশাল নগরির বিএম কলেজ কবি জীবনান্দ হলের সামনের মাঠের পাশে চৌকিতে বসে দিনের হিসাব নিকাশ কসছি।একাকিত্ব যেন চিন্তার মহা সমূদ্রে আমাকে ঠেলে দিচ্ছে।হঠাৎ পাশ থেকে কাগজের ফুল ভর্তি একটি ঝুরি আমার সামনে ধরলো,কচি কন্ঠে বলে উঠলো ভাইয়া একটা ফুল নিবেন?তাকিয়ে দেখি একটি লাল রংয়ের জামা পরে আকর্শনীয় কাগজের ফুলের ঝুরি নিয়ে শুকনো মুখে দারিয়ে রয়েছে ছোট্ট একটি মেয়ে।

কাছে বসিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই বললো শান্তা মনি। ঝুরির সব ফুল কিনে নেওয়ার শর্তে তার সাথে পেতে বসরাম কথার ঝুরি।
কাওনিয়া সহিদুল রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী শান্তা মনির জীবন যুদ্ধ ছোট্ট বেলায় ইংরেজী বইতে পরা ফিরোজার চেয়ে কম নয়।

শান্তা মনি নগরির পশ্চিম কাউনিয়া খানবাড়ী এলাকায় জুলহাসের ভাড়া বাসায় বসবাসরত অটো চালক জসিম সরদার ও গৃহী কর্মী অজিফা দম্পত্তির কন্যা সন্তান।তার একটি ছোট ভাই রয়েছে আকাশ। ফুল বিক্রির টাকায় ৪ সদস্যের এই পরিবারটি এখন কোন মতে জীবন চালাচ্ছে।

বাবা জসিম বছর খানেক আগে তাল গাছ থেকে পরে পা ভেঙ্গে ঘরে পরে রয়েছে। তখন থেকেই নেমে আসে পরিবারটিতে অন্ধকার। মা অজিফা ঝিয়ের কাজ করলেও এখন আর করতে পারছে না। শান্তা ক্লাশ শেষে বিকালে দীর্ঘ ৬/৭মাস যাবৎ মায়ের বানানো কাগজের ফুল বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছে। ছোট ভাই আকাশ মাঝে মাঝে সকালে ফুল বিক্রি করে। শান্তা বিকেল হলেই ফুলের ঝুরি নিয়ে বিএম কলেজ ক্যাম্পাস,বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ নগরির বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ফুল বিক্রি করতে বেরিয়ে পরে।প্রতিটি ফুল ১০ টাকা দরে প্রতিদিন দুই ভাইবোন মিলে ২০০-৩০০টাকা উপার্জন করে মায়ের হাতে তুলে দেয়।সেই টাকায় বাবার ঔষদ, সংসার খরচ চলে।

শান্তা মনি হাত পেকে ভিক্ষা করতে রাজি নয়। হয়তো শান্তা মনি একদিন বড় হয়ে যাবে। হয়তো সে একদিন ফুল বিক্রি করতে পারবে না।কোন দিন হয়তো শান্তা মনি সমাজের নরপিচাদের কবলে পরবে। খবরের কাগজে সংবাদের শিরোনাম দেখে আমরা শোকহাত হবো। সমাজের বিত্তবান ও জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করবো যাহাতে ফুল বিক্রেতা শান্তামনির জীবন অন্ধকার নেমে আশার আগে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email