১১তম বার্ষিকী আজ পিপি হায়দার হত্যাকারীদের রিভিউ আদেশ নিয়ে শঙ্কায় পরিবার
মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু মোঃ শাহাদাত হোসেন মনু
সিনিয়র সাংবাদিক

আজ ১১এপ্রিল। জমিয়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র গুলিতে নিহত ঝালকাঠির পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইন হত্যার ১১তম বার্ষিকী। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর জেএমবির বোমায় ঝালকাঠির দুই বিচারক সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাড়ে নিহতের ঘটনায় জেএমবি’র বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনা করার অপরাধে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তাকে গুলি করে হত্যা করে জেএমবি সদস্যরা।
অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইন হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর আইনী প্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্র“য়ারী বুধবার অভিযুক্ত ৫ জনের ফাঁসির আদেশ প্রদান করেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আব্দুল হালিম। রায় ঘোষণার পর ৩ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও রায় কার্যকর হয়নি এখনও। হত্যা ঘটনায় রায়ের দিন আদালতে আসামী তানভীর, মুরাদ, আমীর উপস্থিত থাকলেও অপর দুই আসামি বেল্লাল ও সগির এখনও পলাতক রয়েছে। রায় ঘোষনার পর আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্রের নিয়োগকৃত আইনজীবি দন্ড প্রাপ্তদের জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন করেছেন। সেখানে কি আদেশ হয়? এনিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে নিহতের পরিবার।
এ অবস্থায় ফাঁসির আদেশ দ্রুত কার্যকরের দাবী জানিয়েছেন নিহত পিপি হায়দার হোসাইনের পরিবারের সদস্যরা। সেই সাথে আসামীদের পক্ষে জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদনের আদেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মরহুমের একমাত্র পুত্র তারেক বিন হায়দার। তিনি জানান,“ঝালকাঠির আদালত থেকে আমার পিতা (অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইন) কে হত্যাকারি ৫ আসামীর ফাঁসির আদেশ দয়া হয়। আসামী তানভীর, মুরাদ ও আমীর আদালতে উপস্থিত থাকলেও বেল্লাল ও সগির এখনও পলাতক রয়েছে। তারা কোথায় আছে ? তাদেরকে গ্রেফতার না করায় আমাদের বিরুদ্ধে আবার নতুন কোন ষড়যন্ত্র করছে কিনা এ নিয়ে ভয় হচ্ছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ আসামীদের জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন করেছে। সেখানে কি আদেশ হয়? যদি আসামীরা জামিন পেয়ে আবার পলাতক আসামীদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের গোটা পরিবারকেই শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করে কিনা এনিয়ে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর জামিয়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর বোমায় ঝালকাঠি আদালতের সহকারী বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাড়ে নিহত হয়। এরপর জেএমবির শীর্ষ নেতারা পর্যায়ক্রমে আটক হন। জঙ্গিদের ঝালকাঠিতে এনে জেলা জজ আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার কাজ চলে। রাষ্ট্রপক্ষের সরকারী কৌসূলী হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইন।
যার প্রেক্ষিতে বিচারক হত্যা মামলায় আদালত ২০০৬ সালের ২৯ মে ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। দেশের বিভিন্ন কারাগারে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ৬ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখা প্রধান আতাউর রহমান সানি, উত্তরাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী আবদুল আউয়াল, দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী খালিদ সাইফুল্লাহ ও বোমা হামলাকারী ইফতেখার হাসান মামুন। অন্য দন্ডপ্রাপ্ত আসাদুল ইসলাম আরিফ প্রথম থেকেই পলাতক থাকায় তার ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি আজও।
এরই জের ধরে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল শহরের গোরস্থান মসজিদে থেকে এশার নামাজ পড়ে বের হবার সময় বিচারক হত্যা মামলা পরিচালনাকারী পিপি অ্যাডভোকেট হায়দার হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে জেএমবি সদস্যরা। এ ঘটনার পরের দিন নিহত’র একমাত্র ছেলে তারিক বিন হায়দার বাদী হয়ে ঝালকাঠি থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৭, তারিখ-১২ এপ্রিল ২০০৭) দায়ের করেন। মামলার এজাহারে কারো নাম উল্লে¬খ করা না হলেও শীর্ষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার কথা উল্লে¬খ করা হয়।
পিঁপি হত্যা মামলা শুরু থেকে তদন্ত করেছেন ঝালকাঠি থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা, সিআইডি পিরোজপুর ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক আমির হোসেন, পরিদর্শক শাহজাহান খান, তোফাজ্জেল হোসেন। চার্জশিটের আগ পর্যন্ত এ চারজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান সিআইডি পিরোজপুর ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক মোশারেফ হোসেন। তিনি তদন্ত সম্পন্ন করে জেএমবির পাঁচ জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (নং-৫) দাখিল করেন। মামলা দায়েরের ৩৩ মাস পর ২০১০ সলের ১৭ জানুয়ারি রোববার বিকেলে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশীটভূক্ত পাঁচ জঙ্গির মধ্যে বরগুনার তালতলী উপজেলার আমিনুল ওরফে আমির হোসেন (৩৭), খুলনার মুরাদ হোসেন (২০) ও বরগুনার আবু শাহাদাত মোহাম্মদ তানভীর (৩১), পলাতক রয়েছেন ঝালকাঠির বিকনা গাজী বাড়ি মসজিদের ইমাম ও বরগুনার তালতলী উপজেলার বেলল্লাল হোসেন (২৭) ও ঢাকার উত্তরখানের সগির হোসেন ভূঁইয়া (৩৮)।
নিহত পিপি’র সহধর্মিনী কহিনুর বেগম বলেন, আমি খুবই অসুস্থ। যে কোন সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করতে পারি। মারা যাবার আগে যদি স্বামী হত্যার রায় কার্যকর দেখে যেতে পারতাম তাহলে শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ হতো, দ্রুত সম্ভব রায় কার্যকর করা না হলে উচ্চ আদালত থেকে আসামীরা ছাড়া পাবার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পিপি এম আলম খান কামাল বলেন, ৫ জনের ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আসামীদের নথিপত্র উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদনের জন্য গেছে। এর পরে কি হয়েছে এ ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে উচ্চ আদালতের আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করতে সময় লাগে।