চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার মিজানুর রহমান আছেন খাতা কলমে
অফিস সময়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ১০০ ও ৫০ টাকায় পুড়াপাড়া বাজারে নিজস্ব চেম্বারে!!
রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজুল ইসলাম
যশোর প্রতিনিধি

যশোরের চৌগাছা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মধ্য চারটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো হল পাশাপোল ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নারায়নপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জগদীশপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র -এ এক জন উপ-সহকারী ডাক্তার আছেন। বাকি পদ সব শূন্য। সরবরাহ নেই কোনো প্রয়োজনীয় ওষুধ। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার না আসায় তৃণমূলের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গরীব অসহায় মানুষের মধ্যে বেশির ভাগেরই উপজেলা সদরে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি উপ- স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিক্যাল অফিসার, একজন সহকারী চিকিৎসক, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন সেবিকা ও একজন এমএলএসএসের পদ রয়েছে। শুরু থেকেই কেন্দ্রে জনবল সঙ্কট রয়েছে। ১২ বছর ধরে একই কেন্দ্রে চাকুরি করে যাচ্ছেন সহকারি চিকিৎসক মিজানুর রহমান। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, একজন এমবিবিএস ডাক্তার তানভীর হাসানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তিন বছর আগে। ৬ মাস মত চাকরি করে সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ডেপুটেশনে কিংবা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা।
কিন্তু সরেজমিন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ৮/৪/২০১৮ রবিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। কোন ষ্টাফ বা ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় নি। পরের দিন সোমবার সকাল ৮ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত অবস্থান করেও কোন ডাক্তার পাওয়া যায় নি, কেন্দ্রটি তালা বদ্ধ পাওয়া যায়। দেখে বোঝা যাচ্ছে কয়েক মাসের মধ্য দোতলা এই কেন্দ্র টির তালা খোলা হয় নি। পরে বিশস্তসূত্রে জানা যায়, ডাক্তার পুড়াপাড়া বাজারে নিজস্ব চেম্বারে রুগী দেখছেন ১০০ টাকা ফি নিয়ে। গতকাল সোমবার সকাল ১০ টায় পুড়াপাড়া বাজারে একতা ফার্মেসীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারি চিকিৎসক মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রের চাবি আমার কাছে নেয় এ জন্য হাসপাতাল টি তালাবদ্ধ আছে। তিন মাস আগে কেন্দ্রটি মেরামত করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চাবিটি নিয়ে যায়। যার কারণে তালা খোলা যাচ্ছে না। এখন ১০০ টাকা করে ফি নিয়ে রুগী দেখছেন আপনার তো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফ্রি রুগী দেখার কথা। সরকার তো আপনাকে মাসিক বেতন দিচ্ছে তাহলে আপনি কেন্দ্রে না থেকে নিজস্ব চেম্বারে রুগি দেখছেন কেন? এমন প্রশ্নের কোন সদউওর দিতে পারেন নি তিনি। চিকিৎসা নিতে আসা নগর বর্ণি গ্রামের আরাফাত ইসলামের মা বলেন, ডাক্তার যদি কেন্দ্রে থাকত তাহলে ১০০ টাকা ফি লাগত না। বিনা খরচে চিকিৎসা পেতাম।
সুখপুকুরিয়া গ্রামের কিনু মন্ডলের ছেলে মহিদুল মিস্ত্রি, মরহুম ইরশাদ আলির ছেলে আ.মজিদ এবং একই গ্রামের আমিনুর ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রামাঞ্চলে এমবিবিএস ডাক্তাররা থাকতে চান না। ডাক্তারদের মধ্যে সেবার বদলে টাকা আয়ের ঝোঁক প্রবল বলে দাবি করেন তারা। তারা বলেন এই কেন্দ্রে একজন মাত্র উপ-সহকারি চিকিৎসক আছেন। তাকে সময় মত পাওয়া যায় না। বেশিভাগ সময় নিজস্ব চেম্বারে রুগি দেখেন।
সুখপুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তোতা মিয়া বলেন, সরকারে এত টাকা খরচ করে দুতলা বিল্ডিৎ করেছে অসহায় গরীব মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য। যদি তিনি সময় মত না আসেন তাহলে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ছয়টি পদ থাকলেও বর্তমানে আছে ১ টি পদ। চিকিৎসাক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদই শূন্য। এগুলো হচ্ছে মেডিক্যাল অফিসার, সেবিকা ও ফার্মাসিস্ট।
এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: সেলিনা আক্তার বলেন, সুখপুকুরিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন উপ সহকারি ডাক্তার আছেন। কিন্তু তিনি ঠিক মত অফিস করেন না এমন অভিযোগ পায় নি। যদি এমন হয় তাহলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।