
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক অথবা দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী হবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আজ রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী বাছাই করা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমনটা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের নেতারা পুরনো নেতাদের মধ্য থেকেই একজনকে খুলনা সিটি করপোরেশনে দলের মেয়র প্র্রার্থী করতে চান। মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত নেতারা তালুকদার আবদুল খালেক বা সৈয়দ আলীকে নিয়ে ভাবছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ দুই নেতার মধ্য থেকেই একজনকে প্রার্থী করা হবে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। ওই দুই নেতাই দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করছেন ও দলের দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা। তাঁদের মধ্যে সৈয়দ আলী গতকাল শনিবার দলীয় মনোনয়নপত্র ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তবে সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তালুকদার আবদুল খালেক দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমি বর্তমানে সংসদ সদস্য। সে জন্য সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করিনি। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যদি চান আমি সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, তবে অবশ্যই তা পালন করব। আর দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে আমরা সবাই মিলে তাঁকে জয়ী করতে কাজ করব।’ শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘এলাকায় জনপ্রিয়তা কেমন, জনগণের আস্থা আছে কি না, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন এবং যে দায়িত্ব পালন করতে চাইছেন তা পালনে কতটুকু সক্ষম—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আমাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, দলের জন্য ত্যাগ এবং জনমত জরিপে প্রার্থীর অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে আমরা দলীয় মনোনয়ন দেব।’ খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, দলের জন্য ত্যাগ আছে—এমন নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রার্থীদের মধ্যে সৈয়দ আলীর প্রতি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের খানিকটা দুর্বলতা রয়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা খালেক তালুকদার তো সব সময়ই হেভিওয়েট প্রার্থী। এ দুজনের মধ্যেই একজন মনোনয়ন পাবেন।’
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং পরে জাতীয় নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। খুলনা অঞ্চলের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে খালেক তালুকদারের ভূমিকা এবং মেয়র হিসেবে খুলনা সিটি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করার কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই সন্তুষ্ট।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন শেখ সৈয়দ আলী। তিনি বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, আশির দশকে দীর্ঘদিন দৌলতপুর পৌর এলাকার কমিশনার ছিলেন। বিগত জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন সৈয়দ আলী। দলের পুরনো নেতা হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সৈয়দ আলীর।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক নেতা প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতি না পেয়ে তাঁরা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে বিরত থাকেন। গতকাল পর্যন্ত সাতজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাঁরা হলেন শেখ সৈয়দ আলী, সরদার আনিসুর রহমান পপলু, এনায়েত হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, শহিদুল হক মন্টু, শেখ মোশাররফ হোসেন ও মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী এসব নেতা এবং খুলনা জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা, বিভিন্ন থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আজ রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসব নেতার সঙ্গে আলোচনার পরই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ