মির্জা ফখরুল দিনরাত মিথ্যা কথা বলেন

ঠাকুরগাঁওয়ে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

জি এম নিউজ জি এম নিউজ

বাংলার প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ৮:১১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৮ | আপডেট: ৮:১২:পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৮

বিএনপি মহাসচিবের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম সারাদিন কথা বলেন। দিনরাত মিথ্যা কথা বলতে বলতে তার গলা ব্যথা হয়ে যায়। মিথ্যা বলারও একটা সীমা আছে। এত মিথ্যা বললে আল্লাহও নারাজ হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তো বিমানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু বিমানের কী উন্নয়ন করেছিলেন? আমরা ক্ষমতায় এসে দেখলাম বিমান চলে না। সব টাকা-পয়সা লুটপাট করে নেওয়া হয়েছে, বিমানকে তারা ধ্বংস করে রেখে গেছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মির্জা ফখরুল বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকলেও এই এলাকার সৈয়দপুর বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর। তিনি সেই বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখানকার বিমানমন্ত্রী, অথচ এখানকার এয়ারপোর্টই বন্ধ করে দেন। আমরা এই বিমানবন্দর চালু করে দিয়েছি। এখান থেকে এখন সব মানুষ যাতায়াত করতে পারছে। তারা রাজশাহী বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা চালু করেছি। তারা বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ করেছিল, আমরা চালু করেছি।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত আটটি উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে এবং আরও দুটি আসছে।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকার লুটপাট ও দুর্নীতিতে ব্যস্ত ছিল। খালেদা জিয়ার ছেলেরা প্রায় ৯৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুট করে নিয়ে গেছে। এতিমদের জন্য টাকা এসেছে, একটি টাকাও এতিমদের দেয়নি। নিজেরা মেরে খেয়েছে। খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা যে মেরে খায় তার জন্য কিসের আন্দোলন?

 

প্রায় দেড় যুগ পর ঠাকুরগাঁও এসে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা নেন শেখ হাসিনা। ঠাকুরগাঁওবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। গত নির্বাচনে তিনটি আসনেই আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনার ওয়াদা করেন, হাত তুলে ওয়াদা করেন- নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন, আপনাদের সোনার বাংলা উপহার দেব।

 

গতকাল বিকেল পৌনে ৩টায় জনসভা মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভার শুরুতেই ঠাকুরগাঁওবাসীর জন্য ৩৩টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ৩৩ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি পার্ক ও কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পুরো শহর ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে সাজানো হয়। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড গোলচত্বর সাজানো হয় মনোরম সাজে। এর আগে ২০০১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলেন শেখ হাসিনা।

 

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার শাস্তি দুনিয়াতে হয়েছে। পাঁচ বছরের জেল তো কিছু না। মৃত্যু-পরবর্তী শাস্তির বিষয়টি চিন্তা করুন। এতিমদের টাকা মেরে খাওয়ার ফলে আল্লাহর কাছ থেকে যে কত বড় শাস্তি পাবেন সেটা একবার ভাবুন।

 

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা উন্নয়ন করি আর বিএনপি লুটপাট করে। আমরা বিমানবন্দর চালু করি, তারা বন্ধ করে। একের পর এক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে দেশের উন্নয়ন ধ্বংস করছে বিএনপি। তারা ধ্বংস করতে পারে, সৃষ্টি করতে জানে না। লুটপাট করতে জানে, উন্নয়ন দিতে জানে না।

 

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জনগণের সেবক। মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করি। আমার ওপর ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। আমি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ।

 

ঠাকুরগাঁওবাসীর জন্য ৬৬ প্রকল্প : ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইপিজেড স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আন্তঃনগর ট্রেন চালু, ভুল্লী থানাসহ সব উপজেলায় একটি করে স্কুল সরকারি করার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি, বইসহ নানা উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি। এতে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আমাদের সন্তানরা পড়ালেখায় ভালো ফলাফল অর্জন করছে।

 

যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও স্টেশন সড়কের ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তা হতে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত ৪.১৭ কি.মি. সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাধীন উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্র্রসারণ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাধীন বালিয়াডাঙ্গী লাহিড়ী রাস্তায় ৯০৫ মি. চেইনেজে তীরনই নদীর ওপর ৬৯.০৫ মি. দীর্ঘ আরসিসি ব্রিজ; ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্র্রসারণ; ঠাকুরগাঁও জেলার পিটিআই ভবন সম্প্র্রসারণ; রানীশংকৈল উপজেলায় তীরনই নদীর ওপর জলবায়ু ট্রাস্টের ফান্ডের আওতায় কাশিপুর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নির্মাণ; ১.০৫ লাখ মে. টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নতুন গুদাম নির্মাণ প্রকল্প, শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন; আবুল হোসেন সরকার কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, চন্দোরিয়া ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন; রানীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন; হরিপুর মহিলা কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, পীরগঞ্জের ডি. এন ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন; আবদুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, সালনন্দর ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন; ঠাকুরগাঁও সদরে বর্ডার গার্ড উচ্চ বিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও সদর আধুনিক সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, রানীশংকৈল উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, হরিপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, ঠাকুরগাঁও জেলার নবগঠিত রুহিয়া থানা ভবন।

 

যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাধীন ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, পীরগঞ্জ উপজেলাধীন উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্র্রসারণ, পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

 

এডিপি বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

গতকাল ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউসে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের উন্নয়ন। আর এই লক্ষ্য অর্জনের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথভাবে বাস্তবায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

 

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং জেলা প্রশাসক মো. আক্তারুজ্জামান এ সময় জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সম্পদ ও সম্ভাবনা উপস্থাপন করেন।

  • সমকাল

Print Friendly, PDF & Email