ভোট আসে ভোট যায় দশমিনায় চরাঞ্চলের মানুষদের ঘটে না ভাগ্যের পরির্বতন

চরবাসীদের জীবন চিত্র

জি এম নিউজ জি এম নিউজ

বাংলার প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ১১:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০১৮ | আপডেট: ১১:৩৭:অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০১৮

ফয়েজ আহমেদ, দশমিনা প্রতিনিধি ॥
ভোট আসে ভোট যায় , হয় চেয়ারম্যান ,উপজেলা চেয়ারম্যান,কেহ এমপি হয়ে বসেন সংসদ ভবনে । কিন্তু ,পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যর পরির্বতন ঘটেনা। দূর্গম চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যাবস্থা কোন কিছুরই পরির্বতন ঘটেনি এই ৩০/৩৫ বছরে। উপজেলার তেতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর বুকচিড়ে জেগেওঠা চরহাদী, চরশাহজালাল, চরবোরহান, চরবাশবাড়িয়া, চরবোথাম, চরহায়াদর, লালচরের অবহেলিত মানুষের দুরবস্থার কথা শুনে ইতিপূর্বে ৯ টি দেশের ১৮ জন ভূমিহীন কৃষক নেতারা সরেজমিনে পরির্দশন করে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

 

একমাত্র বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন বাংলাদেশ কিষানী সভা এই ভাগ্যাহত চরবাসী জীবন জীবীকা নিয়ে বিভিন্ন সময় কাজ করলেও,এ সংগঠনটি একটি সম্পুর্ন অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়ায়,তেমন কোন জোড়ালো আনন্দোলন দানা বেধে উঠতে পারেনি। তবে একথা সত্যি যে , একমাত্র বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের হাত ধরেই এই ছিন্নমূল মানুষ গুলো এক সময় আশ্রয় পায় এই সকল চরাঞ্চলে। সে সময় ভুমি দশ্যু,দালালচক্র,ভুমিগ্রাসী চক্রের সাথে এক রকম জীবন মরন বাজী রেখে এবং ,ঝড়,জলোচ্ছাস,টর্নেডো,নদী ভাঙ্গন,অতিবৃস্টি,অনাবৃস্টি,খড়ামত প্রাকৃতিক দূর্যোগ গুলোকে মোকাবেলা করে আজও বাঁচার স্বপ্ন দেখে এই চরবাসী মানুষগুলো।

 

তাই তাহাদের আক্ষেপ ভরা বক্তব্যগুলো এ রকমই, কত এলেকসনইতো আইছে,কত কস্ট কইরা হ্যাগোরে ভোটও দিছি, হেইয়ারা কেই মেম্বার হইছে, চেয়ারমান হইছে, আমাগো কি হইছে ? হয়, একটা হইছে,তহন নায়(নৌকায়) খেওয়া পারাইতাম,এহন টলারে চইর‌্যা আই-যাই। আর এমপির লোকেরা আমাগোরে ডাহে মিটিন করার লইগ্যা। এরপর আর আমাগো কোন খবর থাহেনা। কেন, ঐ দিন আপনাদের কিছু দেয় না ? উত্তরে বলেন , হ ,পাইতো এক পোটলা হুরুম(মুড়ী)আর দুডা জেলাপি। এরপরই নেতারা কয় ,তারা তারি লও,টলার ছাড়ার সময় হইছে। অথচ এরাও বাংলাদেশের নাগরিক। মুল ভুখন্ডের সাধারন মানুষগুলোর মত এদেরও রয়েছে স্বাভাবিক ভাবে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার সমান অধিকার। আমরা কি তা দিতে পারছি ?


০১।নেই তেমন কোন শিক্ষা ব্যবস্থা ॥
র্দীঘ ৩০/৩৫ বছর আগে দশমিনার চরাঞ্চলে জন বসতী গড়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত সেখানে মাত্র দুই/তিনটি ছাড়া আর কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। প্রাথমিক শিক্ষার সূযোগ না থাকায় চরাঞ্চলের ৫ হাজার শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিশুরা শিক্ষার সূযোগ না পেয়ে মাছ ধরা, পাতা কাটা এবং মাঠে গরু/মহিষ চড়ানোসহ বিভিন্ন ঝুকিপূর্ন পেষায় নিয়োজিত হচ্ছে।

০২। স্বাস্থ্য সেবা পায়না চরাঞ্চলের মানুষ॥
একটি বে-সরকারী সংস্থা স্পিডট্রাস্ট এর জরিপে দশমিনার চরাঞ্চলে ৫০ হাজার ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষ বসবাস করে। এসব মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে সর্ম্পূন বঞ্চিত রয়েছে। বিভিন্ন রোগ বালাইতে ওঝা,ফকিরের ঝার ফুক কিংবা পানি পড়ার ওপর র্নিভর করতে হচ্ছে আজও। এছারা জরুরী রোগী ও ডেলিভারী রোগী বা প্রসুতিদের তেতুলিয়া/বুড়াগৌরাঙ্গ নদী পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে হাসপাতালে পৌছতে নৌকা যোগে ৭/৮ ঘন্টা এবং ট্রলার যোগে ২/৩ ঘন্টা সময় লাগে । ততক্ষনে বেশ কিছু রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বলেও তথ্য রয়েছে। এছারা চরাঞ্চলে জন্ম নিয়ন্ত্রন সামগ্রী না পাওয়ায় দিন দিন জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকা জনক ভাবে।

০৩। যোগাযোগ ব্যাবস্থা অপ্রতুল॥
এসব চরে যোগাযোগ ব্যাবস্থা না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষদের। এখন পর্যন্ত সেখানে কোন সড়ক নির্মান না করায় বর্ষা মৌসুমে কলার ভেলা আথবা নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে মানুষের চাষ করা ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হয় প্রতিনিয়ত । এতে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয় বলে দাবী ভুক্তভোগীদের।

০৪। বিশুদ্ধ পানির অভাব॥
চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে সেখানকার মানুষ বাধ্য হয়ে নদীর পানি পান করছে। নদীর দূষিত পানি পান করার কারনে বার মাস বিভিন্ন রোগ বালাই লেগেই থাকে চরাঞ্চলে। চরাঞ্চলে হাতে গোনা কয়েকটি টিউবয়েল থাকলেও ঘূর্নি ঝড় সিডর ও আইলার তান্ডবে অকেজ হয়ে পড়েছে অনেকটাই। নিত্য নতুন নতুন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

০৫। ঠেকানো যাচ্ছেনা বাল্য বিবাহ ঃ
সচেতনতার অভাবে চরাঞ্চলে বাল্য বিয়ে বাড়ছে। চর্ঞ্চালের মানুষের ধারনা কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে ছেলে পক্ষের কাছে মেয়ের সমাদর থাকবে অনেক বেশী। তাই ১২-১৫ বছর বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগে তার পরিবার। এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও দূর্গম অঞ্চল হওয়ায় স্থানীয় প্রসাশনের পক্ষেও বাল্য বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না।

০৬। বেড়ি বাধ না থাকায় কোটি টাকার ফসল হানি॥
চরাঞ্চলে দীর্ঘ দিন মানুষ সাইট বেড়ি,বা বেরী বাধ কিংবা পোল্ডারে জন্য দাবী আসলেও, আজো কোন বেড়িবাধ র্নিমান করা হয়নি। এ কারনে প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে কোটি কোটি টাকার ফসল হানি ঘটছে চরাঞ্চলে। বিশেষ করে বর্তমানে ক্ষেতে রয়েছে উঠতি রবী ফসল এবং এ সময়ের সর্বাধিক অর্থকারী ফসল পতেঙ্গা বা তরমুজ।

০৭। চরাঞ্চলের মানুষের বক্তব্য
চরহাদীর কৃষক বারেক হাওলাদার (৪৫) মোসাঃ তারা ভানু (৬০) জানান, ভোটের সময় শুধু চরের মানুষের দিকে নজর পড়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকে প্রতিশ্রুতি দেয়, পরে কেউ মনে রাখে না। চর বাশবাড়িয়ার কৃষক আজাহার বেপারী (৬০) চর শাহজালালের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক হাওলাদার জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি পালনে চরের মানুষকে ভাগ্য ফেরানোর কথা বলে ট্রলার ভরে উপজেলা সদরে নিয়ে মিছিল মিটিং করানো হয়। কিন্তু যুগ যুগেও তাদের ভাগ্যর পরির্বতন ঘটেনি। যদিও চর বাশঁবাড়ীয়ার একটি বিরাট অংশ বীজ বর্ধন খামারে চলেগেছে।

০৮। ভূমি খাদকদের দৌরাত্ব
দশমিনার চরাঞ্চলে ভূমিহীনরা নিজভূমে পরবাসি। দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর আগে তারা বসতি স্থাপন করলেও সকল ভূমিহীনদের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়নি আজও। জোতদার লাঠিয়ালরা প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে ভূমিহীনদের ফসল লুট করে নিয়ে যায়। রয়েছে সীমানা বিরোধ।

০৯। জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য॥
দশমিনা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ইকবাল মাহামুদ লিটন জানান,চরাঞ্চলের সমস্যা সমাধানে কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে চরাঞ্চলের মানুষকে নাগরিক সূযোগ সুবিধার আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ শামসুন্নাহার খান ডলি জানান,সরকারী ভাবে তাদের ক্ষমতা না থাকায় চরাঞ্চলের মানুষের জন্য তারা কোন অবদান রাখতে পারছেন না। ইপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড,শাখাওয়াত হোসেন শওকাত বলেন,আমি ইতিপূর্বে সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত আরোচনা অব্যাহত রেখেছি,আশা করছি অচিরেই দশমিনার চরবাসীর জন্য একটি ভাল ফলাফল আপনাদের জানাতে পাড়বো।কয়েকবার চেস্টা করেও দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email