
নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ৫১জন আরোহী চলে যান না ফেরার দেশে। ৫১জনের পাঁচজন ছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুরের।
পাঁচজনই শ্রীপুরে চলে আসছে কিন্তু এফএইচ প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ন্ময়ী তামাররা কফিনবন্দি হয়ে।
সোমবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে প্রিয়ক ও তামাররার মরদেহ নিজ বাড়ি নগরহাওলায় আসলে শোকে ভারী হয়ে উঠে এলাকায়। এসময় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ছেলে ও নাতীনকে কফিনবন্দি দেখে প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন, তার আহাজারিতে চারপাশ শোকে ভারী হয়ে যায়। মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে ফিরোজা বেগম। আবার হাউ-মাউ করে কাঁদছে আর বলছে পাচঁ বছর আগে বাবাকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলি ওই প্রিয়করে আমারে একলা রাইখা তুই কই গেলিরে! তুইযে আমার একমাত্র ছেলে আই আমার বুকে আই। আমার কলিজার টুকরো আমার নাতীন কই? আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাইবো কে এখন, আমি যে বড় একা হয়ে গেলাম, আমি কারে সাথে নিয়ে হাঁটবো। এ ভাবেই বিলাপ করতে করতে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ফিরোজা বেগম।
প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানির চাচা জিল্লুর রহমান বলেন, স্বামী প্রিয়ক ও শিশু কন্যা তামাররা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন একথা অ্যানিকে বিশ্বাসই করাতে পারছিনা। শুধু বলছে আপনারা আমার সাথে মিথ্যা বলছেন। কফিনবন্দি দেখেও বলছে এই কফিনে অন্য কেউ শুয়ে আছে। এখানে আমার প্রিয়ক ও অ্যানি থাকতে পারেনা। এসব বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে স্বামী সন্তান হারা অ্যানি।
আজ মঙ্গলবার প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যা তামাররার নামাজে জানাজা সকাল ৯টায় শ্রীপুরের আব্দুল আউয়াল বিশ্ববিদ্যাল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। এই কলেজে পড়াশোনা করতেন এফএইচ প্রিয়ক।
জানাজায় মানুষের ঢল।
এর আগে, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আব্দুল আউয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজের শহীদ মিনারের পাদদেশে তাদের মরদেহ রাখা হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এসময় প্রিয়কের সহপাঠী, বন্ধু, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণ শ্রদ্ধা জানান। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানা আকতার ও উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) মো. সোহেল রানা মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক সংলগ্ন জয়না বাজারের পশ্চিম পাশে (মাদবর বাড়ি) মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে প্রিয়ক ও তামররাকে তাদের বাড়ির সামনে প্রিয়কের প্রিয় সেই ফুলের বাগানে সমাহিত করা হয়।